খাগড়াছড়িতে সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসনের ৫ সদস্যের কমিটি

খাগড়াছড়ির গুইমারায় সংঘর্ষে তিন জন নিহত, ১৬ জন আহত এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। এছাড়াও ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ, নিহত ও আহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা ও পূনর্বাসনে কাজ করছে প্রশাসন।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রামসু বাজার এলাকায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করতে এসে সাংবাদিকদের এসব জানান খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার।
এসময় তিনি বলেন, 'ঘটনার পরদিন গতকালও আমরা এখানে এসেছি। আজ আবার ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাড়াতে অল্পকিছু ত্রাণ নিয়ে এসেছি। আহতদের ইতোমধ্যে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামে পাঠানো হয়েছে। নিহতদের পরিবারকে পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া চলমান আছে।'
তিনি বলেন, 'ঘটনা সুষ্ঠু তদন্তের জন্য জেলা প্রশাসন একটি পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আন্দোলনকারী জুম্ম ছাত্র-জনতার নেতাদের সঙ্গেও আমরা বৈঠক করেছি। আলোচনার টেবিলে বসে শান্তিপূর্ণ একটি সমাধান বের করতে আমরা কাজ করছি।'
তিনি আরও বলেন, 'এছাড়াও আন্দোলনকারীদের দেওয়া আট দফা দাবির মধ্যে সাতটি দাবি বাস্তবায়নে আমরা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি।'
জেলা প্রশাসক বলেন, 'আন্দোলনকারীদের ১৪৪ ধারা প্রত্যাহরের দাবিও আমরা বিবেচনা করছি। তবে এর জন্য বাধা হচ্ছে চলমান অবরোধ। অবরোধ প্রত্যাহার করা হলে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসলেই আমরা ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করে নেব।'
এসময়, স্থানীয় মারমা অধিবাসীরা আস্থার সংকট দূর করে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।
তারা অভিযোগ করেন, ঘটনার পর থেকে তারা গ্রাম থেকে বের হতে পারছেন না। তাদের আত্মীয়- স্বজনরাও তাদের দেখতে আসতে পারছেন না। আহতদের মামলার হয়রানি থেকে অব্যাহতি দেয়ার আহ্বান জানান তারা।
এর জবাবে, জেলা পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল বলেন, 'আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়ন কাজ করছে পুলিশ। নিহতদের পরিবারকে মামলা করার আহ্বান জানানো হয়েছে। তারা মামলা করতে না চাইলে পুলিশ বাদি হয়ে মামলা করবে।'
এসময় খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেফালিকা ত্রিপুরা বলেন, 'আস্থার সংকট কাটাতে সবপক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে। হানাহানি পরিহার করে সহমর্মি হতে হবে।'
এসময় বাংলাদেশ মারমা ঐক্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা ও স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান উ-ম্রাসাথোয়াই মারমা, ও বাংলাদেশ মারমা যুব ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক চাইহলাপ্রু মারমা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, খাগড়াছড়িতে এক মারমা কিশোরীকে গণধর্ষণের প্রতিবাদে শনিবার সকাল থেকে অবরোধের ডাক দিয়ে জুম্ম ছাত্র-জনতা নামের একটি সংগঠন।
অবরোধ চলাকালে জেলার গুইমারা উপজেলার রামসু বাজারে দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিন মারমা অধিবাসী নিহত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ অন্তত ১৬ জন আহত হয়।
এসময় দুষ্কৃতকারীদের দেওয়া আগুনে রামসু বাজারে অন্তত ৮৫টি দোকান ও বসতঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। নিহতদের ময়নাতদন্ত শেযে সোমবার রাতে দাহ করা হয়।