পার্বত্য চট্টগ্রামে অবরোধ: থমথমে খাগড়াছড়ি, বান্দরবানে মিছিল
খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় বিক্ষোভ ও সহিংসতাকে কেন্দ্র করে গতকাল রোববার তিনজন পাহাড়ি নিহত ও অন্তত ১০ জন আহতের জেরে রাতেই পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় অনির্দিষ্টকালের অবরোধের ডাক দেয় জুম্ম ছাত্র-জনতা।
আজ সোমবার দিনভর খাগড়াছড়ির পরিস্থিতি ছিল থমথমে। এদিকে বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে একটি মিছিল হলেও জেলা সদরসহ অন্যান্য উপজেলায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এছাড়াও খাগড়াছড়ির পাশের জেলা রাঙ্গামাটিতে কোনো ধরনের মিছিল-বিক্ষোভের খবর পাওয়া যায়নি। দিনভর সেখানকার পরিস্থিতি ছিল স্বাভাবিক।
আজ সকালে জুম্ম ছাত্র-জনতা তাদের ফেসবুক পেইজে এক পোস্টে ঢাকা-খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কে দুপুর ১২টা থেকে অবরোধ শিথিলের ঘোষণা দেয়।

এদিকে সেনাবাহিনীর দেওয়া বিবৃতিকে প্রত্যাখ্যান করে সংগঠনটি দাবি করেছে, খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় ২৭-২৮ সেপ্টেম্বরের ঘটনা নিয়ে সেনাবাহিনী যে বিবৃতি দিয়েছে, তাতে যথাযথভাবে তথ্য উপস্থাপন করা হয়নি।
খাগড়াছড়িতে দিনভর থমথমে পরিস্থিতি
আজ নতুন করে কোনো সংঘাতের ঘটনা ঘটেনি জানিয়ে খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম ও অপস) শেখ বিল্লাল হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'পুরো জেলার পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত আছে। জেলা সদরে হালকা যানবাহন চলাচল করছে। ১৪৪ ধারা জারি থাকায় মানুষের চলাফেরা সীমিত রয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান ছাড়া বেশির ভাগ দোকান বন্ধ রয়েছে।'
'পুরো জেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে আছে, যাতে নতুন করে কোনো সংঘাত ছড়াতে না পারে', যোগ করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ সাবের বলেন, "নতুন করে কোন আহত ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তি হয়নি। গত দুইদিনে হাসপাতালে আসা ১০ জনের চিকিৎসা চলছে। যে তিনজন মারা গেছেন, তাদের মরদেহের ময়নাতদন্তের প্রক্রিয়া চলমান আছে।'
নিহত তিনজন হলেন, গুইমারা উপজেলার রামসু বাজারের বটতলী এলাকার থৈচিং মারমা (২০), সিন্দুকছড়ির দেবলছড়ি এলাকার আথুইপ্রু মারমা (২১) ও হাফছড়ির সাং চেং গুলিপাড়ার আথ্রাউ মারমা (২২)।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার বলেন, সব পক্ষের সাথে আলোচনা করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
বান্দরবানে মিছিল
বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলায় ধর্ষকদের শাস্তি ও গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহতের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে মিছিল করেছে আদিবাসী ছাত্র-জনতা নামের একটি সংগঠন। এছাড়া জেলার সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল বলে জানিয়েছে প্রশাসন ও স্থানীয়রা।
বান্দরবান সদরের অধিবাসী বিপ্লব চক্রবর্তী টিবিএসকে বলেন, 'বান্দরবানে যানচলাচল স্বাভাবিক আছে। অবরোধের তেমন কোনো প্রভাব নেই। জীবনযাত্রাও স্বাভাবিক আছে। তবে খাগড়াছড়ির ঘটনায় একটা চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।'
বান্দরবান জেলার পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ কাওছার টিবিএসকে বলেন, 'রোয়াংছড়ির মিছিলটি ছিল শান্তিপূর্ণ। সকাল ১০টার দিকে মিছিল করে বিক্ষোভকারীরা ফিরে যায়। এছাড়া জেলার কোনো জায়গায় কোনো বিক্ষোভ বা সংঘাতের ঘটনা ঘটেনি।'
রাঙ্গামাটিতে জনজীবন স্বাভাবিক
খাগড়াছড়ি জেলায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর পার্বশ্বর্তী জেলা রাঙ্গামাটিতে কোনো প্রভাব পড়েনি দাবি করে স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, জেলার জীবনযাত্রা স্বাভাবিক আছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে অবরোধের ডাক দেওয়া হলেও রাঙ্গামাটিতে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।