নিম্ন আয়ের মানুষের চাপ কমাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যে ভ্যাট কমানোর আহ্বান

একটি নতুন জরিপে দেখা গেছে, খাবারের দাম বৃদ্ধি ও পরোক্ষ কর বাড়ায় বাংলাদেশের নিম্ন আয়ের একটি বড় অংশ এখন নিয়মিত খাবার বাদ দিচ্ছেন, যা নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যে ভ্যাট কমানোর দাবি আরও জোরালো করেছে।
ইয়ুথ পলিসি নেটওয়ার্ক (ওয়াইপিএন) পরিচালিত এই জরিপে বলা হয়, মূলত খাবারের দাম বৃদ্ধি ও সময় স্বল্পতার কারণে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা মাসিক আয়বিশিষ্ট নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে ৬০ শতাংশ সকালের খাবার বাদ দিচ্ছেন। আবার ৮৮ শতাংশ মানুষ প্রতিদিন ভাতের বিকল্প হিসেবে নিয়মিত রুটি বা বিস্কুট খাচ্ছেন।
জরিপে আরও বলা হয়েছে, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ১৭ দশমিক ০৩ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা দুপুরের খাবারও বাদ দেন।
বুধবার (২৬ জুন) রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) ও ইয়ুথ পলিসি নেটওয়ার্ক (ওয়াইপিএন) যৌথভাবে আয়োজিত 'প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা ও ভ্যাট' শীর্ষক সেমিনারে এই জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করা হয়।
সেমিনার শেষে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে ওয়াইপিএনের ফিল্ড কোঅর্ডিনেটর মো. আকবর হোসেন বলেন, 'পণ্যমূল্য দাম বেড়ে যাওয়াই মানুষের সকালের নাস্তা বাদ দেওয়ার প্রধান কারণ।'
জরিপটি দেশের বিভিন্ন এলাকার এক হাজারেরও বেশি মানুষের ওপর পরিচালিত হয়।
নিত্যপ্রয়োজনীয় প্যাকেটজাত খাদ্যপণ্যের ওপর আরোপিত ভ্যাট কমানোর জন্য সেমিনারে ভোক্তা প্রতিনিধি ও রুটি-বিস্কুট শিল্পের সংশ্লিষ্টরা সরকারকে আহ্বান জানান।
তাদের মতে, বর্তমান করব্যবস্থা একদিকে যেমন নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলছে, তেমনি দরিদ্র, মধ্যবিত্ত ও শিক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি আর্থিক চাপ তৈরি করছে—যারা প্রতিদিনের খাবারের জন্য এসব কম দামি খাদ্যপণ্যের ওপর নির্ভরশীল।
জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় ১৫ শতাংশ মানুষ মনে করেন, রুটি ও বিস্কুটের ওপর ভ্যাটের হার অত্যন্ত বেশি।
জরিপে আরও দেখা গেছে, ভ্যাট বাড়ানোর পর ৭০ শতাংশ খুচরা বিক্রেতা জানিয়েছেন—তাদের দোকানে প্যাকেটজাত রুটি ও বিস্কুটের বিক্রি কমে গেছে। তারা এর কারণ হিসেবে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়াকেই দায়ী করেছেন।
বর্তমানে সরকার এসব পণ্য থেকে বছরে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা ভ্যাট আদায় করছে।
ওয়াইপিএনের প্রধান গবেষক কেএম এমরুল হাসান জানান, আসন্ন অর্থবছরের জন্য ভ্যাট বৃদ্ধির ফলে রুটি-বিস্কুটের আকার ছোট হয়ে যাচ্ছে কিংবা দাম বাড়ছে—যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর।
তিনি বলেন, '৭০ শতাংশ মানুষের প্রত্যাশা ছিল আসন্ন বাজেটে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ইতিবাচক কিছু থাকবে, কিন্তু এই ভ্যাট আরোপে তাদের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।' এ সময় তিনি নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানান।
চলতি বাজেটে এসব খাদ্যপণ্যে ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ইআরএফ সভাপতি দৌলত আখতার মালা। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান।
জরিপে উত্থাপিত উদ্বেগ স্বীকার করে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, ভ্যাট বৃদ্ধির প্রভাব আছে; তবে বর্তমান সরকারের সময়ে এই হার কমানোর সম্ভাবনা কম।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেম। গবেষণার ফল উপস্থাপন করেন ওয়াইপিএনের গবেষণা প্রধান কেএম ইমরুল হাসান।