ডিএমপি’র অভিযানে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ আ.লীগের আরও আট নেতা গ্রেপ্তার

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা, সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লবসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের আরও আট নেতাকে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
ডিএমপি'র গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) সূত্রে জানা গেছে, তারা সবাই সংঘবদ্ধভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টায় জড়িত ছিলেন। এদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় সুনির্দিষ্ট অভিযোগে মামলা রয়েছে। গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
সোমবার (২৩ জুন) ডিএমপির ভ্যারিফায়েড ফেসবুক পেইজে প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা (৭৯), মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লব (৫৫), বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাবেক সদস্য মো. তরিকুল ইসলাম (৩৮), সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি সাবিনা আক্তার তুহিন (৪৬), ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড পিএলসি'র সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুল মওলা (৬২), ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল ওহায়াব (৫৮), লালবাগ থানা ২৫ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান বাবু (৪৩) এবং আওয়ামী লীগের ৯২ নম্বর ওয়ার্ড সহ-দপ্তর সম্পাদক জাকির হোসেন আলী (৬১)।
ডিবি জানায়, রবিবার (২২ জুন ২০২৫) রাত ৮টা ২৫ মিনিটে উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে কে এম নুরুল হুদাকে গ্রেফতার করে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ। একই রাতে তেজগাঁও থানার মনিপুরীপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লবকে গ্রেফতার করে ডিবি-লালবাগ জোনাল টিম।
রাত ১২টা ৩০ মিনিটে কদমতলী থানাধীন শনির আখড়ায় অভিযান চালিয়ে মো. তরিকুল ইসলামকে গ্রেফতার করে ডিবি-মতিঝিল বিভাগের মাদক ও অস্ত্র উদ্ধার টিম। ভোর ৪টা ৪৫ মিনিটে নবাবগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাবিনা আক্তার তুহিনকে গ্রেফতার করে ডিবি-ওয়ারী বিভাগ।
একই সময়ে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুদকের মামলায় মনিরুল মওলাকে গ্রেফতার করে ডিবি-ওয়ারী বিভাগ। রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে কলাবাগান এলাকায় অভিযান চালিয়ে আব্দুল ওহায়াব এবং রাত ২টায় মেহেদী হাসান বাবুকে গ্রেফতার করে ডিবি-মিরপুর বিভাগ। রাত ১টা ৩০ মিনিটে পল্লবী থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে জাকির হোসেন আলীকেও গ্রেফতার করা হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. মহিদুল ইসলাম গতকাল (২২ জুন) দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে উত্তেজিত জনতা আটক করে। নিরাপত্তা বিবেচনায় তাকে দ্রুত পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, 'তাকে ডিবি কার্যালয়ে হস্তান্তর করা হয়েছে। শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা আছে। ডিবি কার্যালয় থেকে তাকে ওই থানায় হস্তান্তর করা হবে।'
এদিকে, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার ওপর গণপিটুনির ঘটনা দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভাইরাল ভিডিওতে দেখা গেছে, উত্তেজিত জনতা তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করছে।
এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে একাধিক মানবাধিকার সংগঠন। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এবং হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি) এক যৌথ বিবৃতিতে ঘটনার নিন্দা জানিয়ে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
সরকারি এক বিবৃতিতে গতকাল জানানো হয়, নুরুল হুদাকে আটক করতে জনতা জড়ো করে যারা আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে সাধারণ নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, কেউ যেন নিজের হাতে আইন তুলে না নেয়।
উল্লেখ্য, নুরুল হুদাকে আটক করা হয় গতকাল সকালে বিএনপি একটি মামলা দায়ের করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই। শেরেবাংলা নগর থানায় করা মামলায় ২৪ জনকে আসামি করা হয়েছে, যাদের মধ্যে রয়েছেন একাধিক সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনার এবং ১০ম, ১১তম ও ১২তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা। মামলায় নির্বাচনী অনিয়ম ও পক্ষপাতের অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
এর আগেও গণপিটুনির ঘটনাগুলোতে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে উপস্থিত হলেও নিষ্ক্রিয় থাকার অভিযোগ রয়েছে। গত মাসে সেনাবাহিনী জানিয়েছিল, কোনো ধরনের প্রাণহানি, সম্পত্তির ক্ষতি, গণপিটুনি বা জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সে সময় সতর্কবার্তাটি স্বস্তি দিলেও, তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। বরং কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ঘটে গেল নুরুল হুদার ওপর হামলার মতো ঘটনা।