‘ড. ইউনূস-তারেক বৈঠকটি টার্নিং পয়েন্টে পরিণত হয়েছে’: ফখরুল

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বহুল প্রত্যাশিত বৈঠকটি দেশের রাজনীতিতে সত্যিকারের একটি টার্নিং পয়েন্টে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ (১৩ জুন) বিকেলে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ফখরুল বলেন, 'গোটা জাতি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠকের জন্য। সবাই এ বৈঠকের ফলাফলের অপেক্ষায় ছিল।'
তিনি আরও বলেন, 'আমি আগেই বলেছিলাম, এ বৈঠক একটি টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে। আল্লাহর দরবারে অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি যে, এটি সত্যিকার অর্থেই একটি টার্নিং পয়েন্টে রূপ নিয়েছে।'
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আলোচনার প্রধান ইস্যু ছিল নির্বাচন। তারেক রহমান প্রস্তাব করেছেন যে এপ্রিল নির্বাচন উপযুক্ত সময় নয়, তাই সেটা পিছিয়ে দেওয়া উচিত। জাতি আনন্দের সঙ্গে লক্ষ্য করেছে, প্রধান উপদেষ্টা এ প্রস্তাবে সম্মত হয়েছেন এবং দু'জন মিলে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, 'তারেক রহমান আবার প্রমাণ করলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে রাষ্ট্রনায়কোচিত গুণগুলো তার মধ্যেই রয়েছে। প্রথম বৈঠকটি ঘিরে জাতির মধ্যে উদ্বেগ থাকলেও, আল্লাহর হুকুমে তিনি সফল হয়েছেন। আমি দলের পক্ষ থেকে তাকে অভিনন্দন জানাই। একই সঙ্গে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসকে, যিনি অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে এই বৈঠকের মাধ্যমে জাতিকে অচলাবস্থা থেকে মুক্তির স্বপ্ন দেখিয়েছেন।'
তিনি বলেন, এখন প্রয়োজন অতীতের ছোটখাটো কথাবার্তা ভুলে গিয়ে জাতীয় ঐক্যকে দৃঢ় করে সমস্যা সমাধান করে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হওয়া।
ফখরুল বলেন, 'গত ১৫ বছরে ফ্যাসিস্টদের ধ্বংস করা কাঠামোকে আমরা যেন গণতান্ত্রিক কাঠামোতে রূপান্তর করতে পারি—এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়টা গণতন্ত্র উত্তরণের সুযোগ।'
তিনি বলেন, 'আজকের এই দুই নেতা প্রমাণ করেছেন, বাংলাদেশের মানুষ এখনো প্রয়োজনের সময় ঐক্যমত হতে পারে, নেতারা নেতৃত্ব দিতে পারে। সে হিসেবেই বাংলাদেশ সামনে এগিয়ে যাবে।'
মিটিং শেষে তারেক রহমানের সঙ্গে তার কথা হয়েছে জানিয়ে ফখরুল বলেন, 'তিনি গত ১৫ বছরে যারা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন এবং ২০২৪-এর শহীদদের প্রতি সম্মান জানিয়েছেন। আমাদের নেতাকর্মীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তার মাতা ও গণতন্ত্রের মাতা খালেদা জিয়াকে সঠিক দিকনির্দেশনার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।'
ড. ইউনূসের চার দিনের যুক্তরাজ্য সফরের সময় লন্ডনের দ্য ডরচেস্টার হোটেলে আজ বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা থেকে ৩টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত এ উচ্চপর্যায়ের বৈঠকটি হয় বলে জানান বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য সৈয়দ সায়রুল কবীর খান।
বৈঠকে দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান তারেক রহমান আগামী বছরের রমজানের আগেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব দিলে প্রধান উপদেষ্টা ইউনুস তা গ্রহণ করেন।
বৈঠকে তারেক রহমান বলেন, আগামী বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি রমজান শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর আগে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সেটাই উপযুক্ত হবে।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে জানান, বৈঠকে ইউনুসকে জানানো হয়েছে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও মনে করেন, ওই সময়ের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত।
প্রধান উপদেষ্টা এ প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দেন।
ইউনুস বলেন, "আমি ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছি যে, আগামী বছর এপ্রিলের প্রথমার্ধের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে রমজান শুরুর আগের সপ্তাহেই নির্বাচন হতে পারে। সেক্ষেত্রে সংস্কার ও বিচার প্রক্রিয়ায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করতে হবে।"
বৈঠক শেষে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বৈঠকে উপস্থিত থাকা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বৈঠকের ফলাফল নিয়ে বিএনপি সন্তুষ্ট।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "শুধু নির্বাচন নয়, নির্বাচনের পরও সকল দলকে নিয়ে আমাদের নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।"