ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা বাড়ায় দাম ঊর্ধ্বমুখী, বিক্রি হচ্ছে না বড় ষাঁড়

ঈদুল আজহা সামনে রেখে সারা দেশে কোরবানির পশুর হাটগুলোতে ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এতে দাম বেড়েছে এবং অনেক জায়গায় সরবরাহ সংকট দেখা দিয়েছে। তবে বড় আকারের ষাঁড় তেমন বিক্রি হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন খামারি ও বিক্রেতারা।
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহর ও গ্রামীণ হাটে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকার নিচে গরু কিনতে ক্রেতারা ভিড় করছেন। এতে করে উচ্চ চাহিদা ও সীমিত সরবরাহের কারণে দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছেন বিক্রেতারা। বিপরীতে, ৩ লাখ টাকার বেশি দামের বড় ষাঁড়গুলোর প্রতি আগ্রহ অনেকটাই কম।
রাজধানীর মালিবাগ এলাকার খুচরা ব্যবসায়ী কাওসার আহমেদ বলেন, 'প্রতিবছর মাঝারি আকারের গরু কিনি, কিন্তু এবার দাম ১৫-২০ শতাংশ বেশি। তাই দুই বন্ধু ও এক আত্মীয় মিলে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকায় বড় একটি ষাঁড় কিনে ফেলেছি। গত বছরের চেয়ে প্রায় ৫ শতাংশ সাশ্রয় হওয়াতে তুলনামূলকভাবে এটা লাভজনক লেগেছে।'
এই ক্রয় অভ্যাসে পরিবর্তনের পেছনে সামগ্রিক অর্থনৈতিক চাপ কাজ করছে বলে মনে করেন অনেকে।
ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছেন এমন এক ব্যাংক কর্মকর্তা শাহীন বলেন, 'নগদ অর্থের ঘাটতি, ঋণের চাপে আগের সেই বড় গরু দিয়ে বাহাদুরি দেখানোর প্রবণতা অনেক কমে গেছে। ধনী শ্রেণিও এখন বাড়তি খরচ এড়াচ্ছে।'
গত বছর অতিমূল্যবান একটি ছাগলের ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল। শাহীন বলেন, 'সে রকম ভুল আর কেউ করতে চায় না।'
অনেক পরিবারের কমে যাওয়া ব্যয়ক্ষমতা কোরবানির পশু কেনার সামর্থ্যকেও প্রভাবিত করছে।
ব্যাংক কর্মকর্তা আশিকুর রহমান বলেন, 'যে মাঝারি গরুটি কিনেছি, তার দাম ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা, যা গত বছর হলে ১.৪ লাখে পাওয়া যেত। আর্থিক চাপে এবার কোরবানির সংখ্যা কমবে বলেই মনে হয়।'
এই পরিবর্তন বিক্রেতারাও টের পাচ্ছেন।
মুন্সিগঞ্জ থেকে রাজধানীর পোস্তগোলা হাটে ১৫টি গরু নিয়ে আসা আল আমিন বলেন, 'ছোট ও মাঝারি গরুগুলো ভালো দামে বিক্রি হয়েছে। কিন্তু ৪টি বড় ষাঁড়ের মধ্যে মাত্র একটি বিক্রি হয়েছে। বাকিগুলো খাওয়াতে খাওয়াতেই লাভের টাকাই শেষ হয়ে যাবে মনে হচ্ছে।'
তিনি জানান, বড় ষাঁড়ের দাম গত বছরের তুলনায় ১০ শতাংশ কম হলেও ক্রেতারা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
গাজীপুরের বাসিন্দা ফয়সাল জানান, তিন দিন আগে তিনি সরাসরি এক কৃষকের কাছ থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকায় একটি গরু কিনেছেন। 'এখন হাটে একই ধরনের গরু ১৫-২০ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে দেখে আমি বেশ খুশি,' বলেন তিনি।
সেই কৃষকও জানান, ঢাকার হাটে গত দুই মৌসুমে ভালো দাম না পাওয়ায় এবার স্থানীয়ভাবে বিক্রি করেই সন্তুষ্ট। তিনি বলেন, 'পরিবহন খরচ ও ঝামেলা এড়াতে কিছুটা কম দামেই বিক্রি করলাম, তবু লাভেই আছি।'
ঢাকার ২১টি অনুমোদিত কোরবানির হাটজুড়ে দাম ও সরবরাহে ব্যাপক তারতম্য দেখা যাচ্ছে। এক হাট থেকে অন্য হাটে গরুর দামে বড় পার্থক্য রয়েছে।
হাতিরপুলের বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম বলেন, 'কয়েকটি হাট ঘুরে হতাশ হয়ে শেষে গত শুক্রবার গাবতলী হাট থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকায় একটি ষাঁড় কিনেছি। অন্যান্য হাটে দাম অনেক বেশি ছিল। এবারে স্পষ্টভাবে চাহিদা ও জোগানে ভারসাম্য নেই।'