‘সশরীরে এটি ঠেকানো সম্ভব নয়, ভারতকে আবারও চিঠি দেওয়া হবে’: পুশ ইন নিয়ে তৌহিদ

ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ গত ২৮ দিনে বাংলাদেশে ১ হাজার ১৬৯ জনকে পুশ ইন করেছে। এ নিয়ে আজ বা আগামীকাল (বুধবার) ভারত সরকারকে আরেকটি চিঠি দেবে বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার (৩ জুন) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এ তথ্য জানান।
এখনো পুশ ইনের ঘটনা ঘটছে এবং শারীরিকভাবে এর মোকাবিলা করা সম্ভব না উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, 'আজ অথবা আগামীকাল আমরা তাদের একটা নতুন চিঠি দেব। আমরা একটা বস্তুনিষ্ঠ চিঠি দিচ্ছি।'
তিনি বলেন, পুশ ইন বন্ধে ভারতের সঙ্গে কনস্যুলার পদ্ধতির আওতায় (কনস্যুলার ডায়লগ) কাজ করতে চায় ঢাকা।
চিঠির ভাষা নরম হবে নাকি প্রতিবাদপত্রের মতো হবে—এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, সেটি নির্ভর করছে বিষয়টি তারা কীভাবে দেখছে তার ওপর।
তিনি বলেন, পুশ ইন ইস্যুতে ভারতের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে বাংলাদেশের। নির্ধারিত প্রক্রিয়ার বাইরে কিছু না ঘটুক, সে চেষ্টাই করছে ঢাকা। এই প্রেক্ষাপটে ভারতের দেওয়া একটি তালিকা থেকে যাচাই-বাছাই করে কিছু লোককে গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ।
তৌহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের অবস্থান হলো—প্রতিটি অভিযোগ পৃথকভাবে যাচাই করে বাংলাদেশের নাগরিক বলে প্রমাণিত হলেই কেবল তাদের গ্রহণ করা হবে।
পুশ ইন ইস্যুর পাশাপাশি ভারতে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কোনো অগ্রগতি আছে কি না—এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, 'এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি।'
ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের দ্রুত যাচাইয়ের আহ্বান জানিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সম্প্রতি জানান, প্রায় ২ হাজার ৩৬০ জন বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে।
নয়াদিল্লিতে নিয়মিত এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, এদের অনেকে ইতোমধ্যে সাজাভোগ শেষ করেছেন। 'বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জাতীয়তা যাচাই এখনো বাকি। এটা ২০২০ সাল থেকে ঝুলে আছে। প্রায় পাঁচ বছর হয়ে গেল।'
তিনি বলেন, এই প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে, যাতে যাদের ফেরত পাঠানোর কথা, তাদের ফেরত পাঠানো যায়। 'এটা দ্রুত করতে হবে,' বলেন মুখপাত্র।
জয়সওয়াল আরও বলেন, ভারতে যারা অবৈধভাবে অবস্থান করছেন—বাংলাদেশি হোন বা অন্য যেকোনো দেশের—তাদের ক্ষেত্রে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ মে থেকে ৩ জুন পর্যন্ত ২৮ দিনে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বাংলাদেশের ১৮টি সীমান্ত জেলায় মোট ১ হাজার ১৬৯ জনকে পুশ ইন করেছে।
সবচেয়ে বেশি ৩৮০ জনকে পুশ ইন করা হয়েছে মৌলভীবাজারে। এরপর খাগড়াছড়িতে ১৩২ জন, সিলেটে ১১৫ জন এবং কুড়িগ্রামে ৯৩ জনকে পুশ ইন করা হয়।
এ ছাড়া পুশ ইন করা অন্যান্য জেলার মধ্যে রয়েছে হবিগঞ্জ (৪১), সুনামগঞ্জ (১৬), কুমিল্লা (১৩), ফেনী (৫২), লালমনিরহাট (৮৫), ঠাকুরগাঁও (১৯), পঞ্চগড় (৫৮), দিনাজপুর (১৫), চাঁপাইনবাবগঞ্জ (১৭), কুষ্টিয়া (৯), মেহেরপুর (৩০), চুয়াডাঙ্গা (১৯), ঝিনাইদহ (৫২) এবং সাতক্ষীরা (২৩)।