হাদির খুনি ভারতে পালানোর ডিএমপির ভাষ্যকে ‘ভিত্তিহীন’ দাবি করল মেঘালয় পুলিশ, বিএসএফ: হিন্দুস্তান টাইমস
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদিকে হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ফয়সাল করিম মাসুদ ও আলমগীর শেখ ভারতে পালিয়ে গেছে—ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পুলিশ ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।
ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস (এইচটি) এক প্রতিবেদনে দাবি করে, মেঘালয় পুলিশ সদর দপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাদেরকে জানিয়েছেন যে, এ বিষয়ে বাংলাদেশ থেকে তাদের সঙ্গে "আনুষ্ঠানিক বা বা অনানুষ্ঠানিকভাবে যোগাযোগও" করা হয়নি।
হিন্দুস্তান টাইমসকে মেঘালয় পুলিশের ওই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা গণমাধ্যমটিকে ফোনে আরও জানান, যাদের নাম এসেছে, তাদের কেউই গারো পাহাড় এলাকায় শনাক্ত হয়নি এবং এখন পর্যন্ত কোনো গ্রেপ্তারও হয়নি।
এ ছাড়া মেঘালয় ফ্রন্টিয়ারের বিএসএফের মহাপরিদর্শক ওপি উপাধ্যায় ডিএমপির দাবি নাকচ করে একে "ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর" বলে উল্লেখ করেন।
আজ রোববার (২৮ ডিসেম্বর) হাদির হত্যা মামলার তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) এস এন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ঘটনার দিনই হাদিকে গুলি করা ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ ওরফে রাহুল ও মোটরসাইকেল চালক আলমগীর শেখকে শনাক্ত করা হয়। তাৎক্ষণিক তাদের গ্রেপ্তারের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক টিম সাভার, হেমায়েতপুর, আগারগাঁও, নরসিংদীতে অভিযান পরিচালনা করে। ধারাবাহিক অভিযানের অংশ হিসেবে ডিএমপির একটি টিম ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের সীমান্তবর্তী এলাকা পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করে।
তিনি বলেন, তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন, গ্রেপ্তারকৃতদের দেওয়া জবানবন্দি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ঘটনার পর পরই ফয়সাল ও আলমগীর ঢাকা থেকে সিএনজি করে আমিনবাজারে যায়। পরবর্তীতে সেখান থেকে মানিকগঞ্জের কালামপুর যায়। সেখান থেকে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রাইভেট কারে করে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে পৌঁছে।
তিনি জানান, আসামিদের চিহ্নিত করার আগেই তারা সীমান্ত অতিক্রম করতে সক্ষম হয়। তিনি বলেন, আসামি হালুয়াঘাটের আগে মুন ফিলিং স্টেশনে জৈনক ফিলিপ এবং সঞ্জয় তাদেরকে গ্রহণ করার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। ফিলিপ তাদের সীমান্ত পার করার পর ভারতের মেঘালয় রাজ্যের জনৈক পুত্তির কাছে হস্তান্তর করে। পুত্তি ট্যাক্সি ড্রাইভার সামীর কাছে তাদের হস্তান্তর করে। সামী মেঘালয় রাজ্যের তুরা নামক জায়গায় তাদের পৌঁছে দেয়।'
নজরুল ইসলাম আরও বলেন, মেঘালয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে তিনি আরও জানতে পেরেছেন, তারা ইতোমধ্যে পুত্তি ও সামীকে গ্রেপ্তার করেছে। তিনি বলেন, 'আমরা সন্দেহ করছি, আসামিরা অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করেছে।'
এদিকে বিএসএফের মহাপরিদর্শক ওপি উপাধ্যায়কে উদ্ধৃত করে হিন্দুস্তান টাইমস জানায়, হালুয়াঘাট সেক্টর দিয়ে আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরিয়ে মেঘালয়ে অভিযুক্তদের প্রবেশের কোনো প্রমাণ নেই। ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) এসএন মো. নজরুল ইসলামের সংবাদ ব্রিফিংয়ের পরই ভারতীয় এই কর্মকর্তারা তথ্যগুলো অস্বীকার করেছেন।
হাদিকে হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এই ঘটনায় বিভিন্নভাবে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ৬ জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া ৪ জন সাক্ষী ১৬৪ ধারায় সাক্ষ্য দিয়েছেন। চাঞ্চল্যকর এই মামলাটি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। মামলাটির তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আগামী ৭-১০ দিনের মধ্যে আমরা চার্জশিট দিতে সক্ষম হবো।
ডিএমপি আরো জানায়, এই ঘটনায় জব্দকৃত আলামতের মধ্যে রয়েছে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুইটি বিদেশি পিস্তল, ৫২ রাউন্ড গুলি, ম্যাগাজিন, ছোরা, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, ভুয়া নম্বরপ্লেট, হাদিকে বহনকারী অটোরিক্সা, ৫৩টি অ্যাকাউন্টের বিপরীতে ২১৮ কোটি টাকার স্বাক্ষরিত চেক ইত্যাদি।
আসামিদের ফিরিয়ে আনতে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দি বিনিময় চুক্তি আছে। আমরা আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক দুইভাবেই তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি।
হত্যাকাণ্ডের মোটিভ কি জানতে চাইলে ডিবি প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, 'আমরা কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছি। এটা রাজনৈতিক কারণে হতে পারে। তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম প্রকাশ করছি না।'
গত ১২ ডিসেম্বর দুপুর ২টা ২০ মিনিটে বিজয়নগরের বক্সকালভার্ট রোড দিয়ে অটোরিকশা যাওয়ার সময় মাথায় গুলিবিদ্ধ হন শরীফ ওসমান হাদি। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে এভারকেয়াে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর মারা যান হাদি। এই ঘটনায় প্রথমে একটি হত্যাচেষ্টা মামলা করা হলেও পরবর্তীতে সেটি হত্যা মামলায় রূপ নেয়। বর্তমানে মামলাটি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তদন্ত করছে।
