সংস্কারের কথা বলে নির্বাচনের রোডম্যাপ পেছানোর সুযোগ নেই: আমীর খসরু

সংস্কারের কথা বলে নির্বাচনের রোডম্যাপ পেছানোর কোনো সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। নির্বাচন নিয়ে হেলাফেলা চলবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বুধবার (২৮ মে) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত তারুণ্যের সমাবেশ থেকে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, 'আজ তরুণদের সুনামি হয়েছে, তারা গণতন্ত্র ও নির্বাচনের বার্তা দিচ্ছে। সংস্কারের কথা বলে নির্বাচনের রোডম্যাপ পেছানোর কোনো সুযোগ নাই। বিচারের কথা বলে নির্বাচনের রোডম্যাপ পেছানোর কোনো সুযোগ নাই।'
'সাত বছর আগে ভিশন ২০৩০ জাতির সামনে তুলে ধরেছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দুই বছর আগে ২৭ দফা দিয়েছিলেন তারেক রহমান,' যোগ করেন তিনি।
সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপের ফলাফল নিয়েও মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য। তিনি বলেন, 'এখন বলা হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয়ে নাকি ঐকমত্য হয়নি। গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে ঐকমত্য না হয়ে থাকলে সেটা করবে জনগণ। ভোট ও ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার সেই সংস্কার করবে।'
বিচার অসম্পূর্ণ থাকলে সেই দায়িত্ব বিএনপি পালন করবে উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, 'কারণ আমাদের মতো এতো কঠিন সময় কেউ পার করেনি। আমাদের মতো এতো ত্যাগ কেউ করেনি। ৫ আগস্ট না হলে রাষ্টর পরিচালনায় যারা আছেন তাদের অনেকে বিদেশে থাকতেন। আর আমাদের হয় জেলে, না হয় ফাঁসির কাষ্ঠে থাকতে হতো। সুতরাং বিচারকাজ বাকি থাকলে সেটা বিএনপি করবে, তোমাদের ওপর কোনো ভরসা নাই।'
এদিকে সকাল থেকেই খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দিতে শুরু করেন নেতাকর্মীরা। বেলা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে জনসমাগম। এতে কাকরাইল থেকে আরামবাগ জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে।
দুপুর ২টার দিকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের এই সমাবেশ শুরু হয়। কার্যালয়ের বিপরীতে সমাবেশ মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল এই সমাবেশ আয়োজন করেছে।
সরেজমিনে সমাবেশ ঘুরে দেখা যায়, আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হওয়ার আগেই ঢাকাসহ গাজীপুর, নারায়াণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, সিলেট, ফরিদপুর থেকে পিকআপ ও বাসে করে দলটির নেতাকর্মীরা সমাবেশ স্থলে জড়ো হয়েছেন।
ছাত্রদল, যুবদল এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা মাথায় লাল, সবুজ ও হলুদ রঙের দলীয় লোগোযুক্ত ক্যাপ ও ব্যানার হাতে সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। জাতীয় সংগীত ও দলীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে এই কর্মসূচি শুরু হয়।
সমাবেশের কারণে কাকরাইল থেকে পল্টন ও আশপাশের এলাকায় সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। গাজীপুর থেকে আসা যুবদল কর্মী সুমন শিকদার বলেন, 'এই সমাবেশের মূল আকর্ষণ তরুণদের প্রতি তারেক রহমানের বক্তব্য। বর্তমান রাজনীতি তরুণদের, তারা আগের তুলনায় এখন অনেক বেশি রাজনীতি সচেতন। বিএনপিও তরুণদের নিয়ে আলাদা করে ভাবছে এবং এই প্রজন্মকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে।'
রাজধানীর বাসাবো এলাকার ছাত্রদল নেতা সাইমুন বলেন, 'জুলাই অভ্যুত্থান ও এর আগের সব আন্দোলনে আমরা (ছাত্রদল) মাঠে ছিলাম। যতই ঝড়-ঝাপটা এসেছে ছাত্রদল কোনোদিন জনবিচ্ছিন্ন হয়নি। বিএনপির তারুণ্যের মূল চালিকাশক্তি ছাত্রদল; আগামীতেও তারেক রহমানের শক্ত হাত হতে কাজ করবে সংগঠনটি।'
এর আগে, চট্টগ্রাম, খুলনা, ও বগুড়ায় তারুণ্যের সমাবেশ করেছে বিএনপি। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নয়াপল্টনের সমাবেশে প্রায় ১৫ লাখ তরুণ যোগদান করেছেন, যাদের মূল আকাঙ্ক্ষা ভোটের অধিকারের মাধ্যমে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের নতুন বাংলাদেশ।
সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত থাকবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দেশের তরুণ প্রজন্মের সামনে তিনি দলের রাষ্ট্রচিন্তা, রাজনৈতিক রূপরেখা ও ভবিষ্যৎ কৌশল তুলে ধরবেন বলে আশা করছেন নেতাকর্মীরা।
এ ছাড়া, সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমদসহ শীর্ষ নেতারাও উপস্থিত আছেন।