১৩ দিন ধরে অবরুদ্ধ নগর ভবন: ভোগান্তির শেষ কোথায়?

গত ১৩ দিন ধরে বন্ধ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বেশিরভাগ নাগরিক সেবা। বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের সমর্থক ও সিটি করপোরেশনের কর্মচারী ইউনিয়নের যৌথ আহ্বানে শুরু হওয়া আন্দোলনের কারণে এই স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
ফলে দক্ষিণ সিটির গুরুত্বপূর্ণ সব সেবা—দাপ্তরিক কাজকর্ম, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, নাগরিকত্ব সনদ, উত্তরাধিকার দলিল ও ভূমি হস্তান্তর-সংক্রান্ত কার্যক্রম—সবই বন্ধ হয়ে গেছে।
মাত্র দুটি সেবা চালু আছে—বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও মশা নিয়ন্ত্রণ। তবে কীটনাশকের অনিয়মিত সরবরাহের কারণে মশক নিয়ন্ত্রণের কাজও ব্যাহত হচ্ছে।
৪৮ ঘণ্টার বিরতির পর গতকাল ফের ইশরাককে অবিলম্বে মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণ করানোর দাবিতে ইশরাকের সমর্থক ও দক্ষিণ সিটির কর্মীরা অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জিল্লুর রহমান টিবিএসকে বলেন, 'নগর ভবনে গত ১৩ দিনে কোনো কাজ করা সম্ভব হয়নি। অফিশিয়াল কাজ আমরা আংশিক করার চেষ্টা করছি। যেগুলো অতীব জরুরি, যেমন নির্দিষ্ট তারিখে শেষ হবে এমন কাজ কিংবা টেন্ডারের কিছু কাজ সচিবালয়ে বসে করতে হচ্ছে। দিনে দিনে জরুরি কাজ আটকে থাকায় নগরের বাসিন্দাদের সঙ্গে আমাদেরও ভোগান্তি বাড়ছে।'
রাজস্ব আদায় ও ঈদ প্রস্তুতিতেও ধাক্কা
মে ও জুন এই দুই মাস ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব আদায়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময় বছরের এক-তৃতীয়াংশের বেশি রাজস্ব আয় হয়। কিন্তু আন্দোলনের কারণে রাজস্ব আদায় কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।
প্রতিবছর ঈদুল আজহার আগে গরুর হাট ইজারাম বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা ইত্যাদি বিষয়ে বড় ধরনের প্রস্তুতি নেয় সিটি করপোরেশন। কিন্তু এবার এসব কাজের কিছুই এগোয়নি।
সিটি করপোরেশনের উপ-প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা শাহজাহান আলী বলেন, '১৪ জুন পর্যন্ত অফিস বন্ধ থাকবে ঈদের ছুটির জন্য। এই সময়টুকু রাজস্ব আদায়ের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কিন্তু আমরা কাজ করতে পারছি না। বছরের অধিকাংশ রাজস্ব এই সময় ও আগস্ট মাসে আসে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা ইতিমধ্যে জোরালো কর্মসূচি শুরু করেছিলাম। কিন্তু গত বছরের ছাত্র আন্দোলন রাজস্ব আদায়ের গতি ধীর করে দেয়। এবার যখন অবস্থার উন্নতি হতে শুরু করেছিল, তখনই এই অচলাবস্থা শুরু হলো।'
ঈদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়েও শঙ্কা
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমোডর মো. মাহবুবুর রহমান তালুকদার বলেন, 'আমাদের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ঈদের সময় কোরবানির বর্জ্য সামলানো। গরুর হাটের টেন্ডার বা প্রাক-ঈদ প্রস্তুতি সভা কিছুই করতে পারিনি।'
তিনি আরও বলেন, 'ময়লা পরিবহনের গাড়ি মেরামত, ব্লিচিং পাউডারসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনার কাজ বন্ধ আছে। এভাবে চললে ঈদের সময় কোরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা মারাত্মক চ্যালেঞ্জ হবে।'
ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নিশাত পারভীন বলেন, 'আমরা সাধারণত সপ্তাহে একবার করে কীটনাশক সরবরাহ করি। কিন্তু নগর ভবন বন্ধ থাকায় মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কর্মীদের বলা হয়েছে মজুত থাকা সামান্য ওষুধই রেশন করে চলতে।'
এই আন্দোলনের সূত্রপাত ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে। ওই নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগের মধ্যেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
ইশরাক সেই ফলাফল চ্যালেঞ্জ করে আদালতে যান। ২০২৫ সালের ২৭ মার্চ নির্বাচন ট্রাইব্যুনাল তাপসের বিজয় বাতিল করে ইশরাককে বৈধ মেয়র ঘোষণা করেন। নির্বাচন কমিশন ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে বিষয়টি নিশ্চিত করে।