বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ একসঙ্গে প্রকাশের আহ্বান এনসিপির

বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ একসঙ্গে প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
শনিবার (২৪ মে) রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, 'বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন তিনটির রোডম্যাপ একসাথে প্রকাশ করা উচিত। তাহলে জনমনে ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে স্বস্তি তৈরি হবে। আস্থার জায়গা তৈরি হবে। পাশাপাশি জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্তিতি, জাতীয় নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য দায়িত্বশীল আচরণ করব আমরা, এবং সবকিছু আলাপ-আলোচনার মধ্যে সমাধান করব।
এছাড়া নির্বাচনের পাশাপাশি বিচার ও মৌলিক সংস্কারও অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, 'অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা বিচার ও সংস্কার এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর। শুধু নির্বাচন আয়োজন নয়, বরং বিচার ও মৌলিক সংস্কার করা এই অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব। আমাদের আহ্বান থাকবে ড. ইউনূস দায়িত্বে থেকেই রাজনৈতিকভাবে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের দিকে যাবেন। আমরা মনে করি যে জুলাই ঘোষণাপত্র নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ব্যবস্থা করা উচিত।'
গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জনরোষ বাঁচতে বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া ৬২৬ জনের তালিকা প্রকাশের বিষয়ে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, 'সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ৬২৬ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এটি যদি আরো আগেই প্রকাশ করা হতো তাহলে সন্দেহ ও শঙ্কা থাকতোনা। তাহলে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কথা বলার সুযোগ থাকতোনা। সেনাবাহিনী আমাদের সার্বভৌমত্বের প্রতীক। সেনাবাহিনী গণঅভ্যত্থান ও পরবর্তী সময়ে যে ভূমিকা পালন করছে সেটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।'
নাহিদ বলেন, কিন্তু একইসাথে আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে বিভিন্ন সময় দেখেছি সেনাবাহিনীর সাথে রাজনীতির একটা সম্পর্ক কখনো কখনো তৈরি হয়। আমরা ওয়ান-ইলেভেনের কথা জানি। এসব ঘটনা আমাদের গণতন্ত্রের জন্য, রাষ্ট্রের জন্য এবং আমাদের সেনাবাহিনী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কারো জন্য কখনোই ভালো ফলাফল নিয়ে আসেনি। সেই বিষয়টি যেন আমরা সকলেই বিবেচনা করি। যার যেটা কাজ সে যেন সেটাই পালন করে।
তিনি আরও বলেন, 'বিগত আমলে রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করা হয়েছে। আমলাতন্ত্র, পুলিশ, সেনাবাহিনী এবং তাদেরকে দিয়ে নানা ধরনের মানবতা বিরোধী কাজ করানোর অভিযোগ রয়েছে। প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানেই এসময়ে এসে একটা বিচারের মধ্যে দিয়ে যারা অভিযুক্ত, তাদেরকে শায়েস্তা করবে এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাষ্ট্রীয় ও জনগণের প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুন:প্রতিষ্ঠা করবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
নাহিদ বলেন, 'গুমের অভিযোগ যেসব সেনা অফিসারের বিরুদ্ধে রয়েছে, তাদের মধ্যে অনেকেই গ্রেপ্তার হননি। বা তাদের অবস্থান এখন কী, সে বিষয়ে কিন্তু আমরা জানি না। ফলে এই বিষয়গুলো সুস্পষ্ট করলে সেনাবাহিনী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আরও বেশি জনগণের আস্থার জায়গাটা পাবে। এবং আমরা সেই আস্থার জায়াগাটিতে সেনাবাহিনীকে দেখতে চাই।'
'ছাত্র উপদেষ্টাদের সঙ্গে এনসিপির কোনো সম্পর্ক নেই'
নাহিদ বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারে যে দুই ছাত্র উপদেষ্টা—আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলম—রয়েছেন, তাদের সঙ্গে এনসিপির কোনো সম্পর্ক নেই। তারা যদি রাজনীতি ও নির্বাচন করতে চান, তাহলে তারা সরকারে থেকে সেটা পারবেন না। তখন তারা সরকার থেকে বের হয়ে তাদের মতো সিদ্ধান্ত নেবেন।
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, 'তারা (দুই ছাত্র উপদেষ্টা) গণঅভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে গণঅভ্যুত্থানের প্রতিনিধি হিসেবে সেই সময়ে সরকারে গিয়েছিলেন। আমিও তাদের সঙ্গে ছিলাম। তারা যদি রাজনীতি করতে চান, নির্বাচন করতে চান, তাহলে তারা সরকারে থেকে সেটা পারবেন না।'
তিনি বলেন, 'দুই উপদেষ্টার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক না থাকার পরও তাদেরকে জাতীয় নাগরিক পার্টির সঙ্গে সংযুক্ত করে এক ধরনের অপপ্রচার এবং তাদের হেয় করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা বলব, এটি খুবই উদ্দেশ্যমূলক। গণঅভ্যুত্থানের প্রতিনিধি হিসেবে যারা গিয়েছেন, সরকার থেকে তারা বের হবেন বা আদৌ বের হবেন কি না সেটা তাদের সিদ্ধান্ত। আমাদের প্রত্যাশা, গণঅভ্যুত্থানের বৈধতাসহ আকাঙ্ক্ষাগুলো বাস্তবায়নের ছাত্র উপদেষ্টাসহ সব উপদেষ্টা একত্রে কাজ করবেন। দুজন ছাত্র উপদেষ্টাকে জাতীয় নাগরিক পার্টির সঙ্গে সংযুক্ত করে যে অপপ্রচার করা হচ্ছে আমরা তার নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি।'
এ সময় এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, জেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।