ধানমন্ডিতে পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে বাকবিতণ্ডা: হান্নান মাসউদের জিম্মায় ছাড়া পেলেন ৩ সমন্বয়ক

রাজধানীর ধানমন্ডিতে পুলিশের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের (বৈবিছাআ) নেতাদের বাকবিতণ্ডার ঘটনায় আটক করা তিনজনকে জাতীয় নাগরিক কমিটির সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক হান্নান মাসউদের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (২০ মে) ধানমন্ডি জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) শাহ মোস্তফা তারিকুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
পুলিশ জানিয়েছে, বৈবিছাআ নেতা পরিচয়ে তিন ব্যক্তি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে তাদের হেফাজতে নেওয়া হয়। পরে বিকেলে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
পুলিশ হেফাজতে নেওয়া তিনজন হলেন মোহাম্মদপুর থানার বৈবিছাআ আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম রাব্বী, ঢাকা মহানগর শাখার সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ফারহান সরকার দিনার এবং পদবিহীন সদস্য মো. উল্লাহ জিসান।
এসি তারিকুজ্জামান দুপুরে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'সোমবার (১৯ মে) রাতে ধানমন্ডির ৪ নম্বর সড়কে একজন প্রকাশককে 'ফ্যাসিবাদের দোসর' আখ্যা দিয়ে কয়েকজন ব্যক্তি তার বাসায় ঢোকার চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে ওই ব্যক্তিরা নিজেদের বৈবিছাআ নেতা পরিচয় দিয়ে ওই প্রকাশককে গ্রেপ্তারের দাবি জানান। তবে তার [প্রকাশকের] বিরুদ্ধে কোনো মামলা না থাকায় পুলিশ গ্রেপ্তারে অপারগতা প্রকাশ করে।
এর জের ধরেই পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয় এবং পরে সিনিয়র কর্মকর্তাদের নির্দেশে তিনজনকে ধানমন্ডি থানায় নেওয়া হয়। দুপুর দুইটা পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি বলে জানান এই কর্মকর্তা।
ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ক্যশৈনু জানান, মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় নাগরিক কমিটির সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক হান্নান মাসুদের জিম্মায় তিনজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, 'তাদের একজন সিনিয়র সমন্বয়ক এসেছিলেন। তার জিম্মায় আটকদের ছেড়ে দিয়েছি।'
এই বিষয়ে হান্নান মাসউদ সাংবাদিকদের বলেন, 'এমনি খোঁজ-খবর নিতে এসেছি। একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল, সেটা মীমাংসা করা হলো। এই ঘটনায় বাইরের অনেকেই জড়িত আছে। সেগুলো আমরা খতিয়ে দেখছি।'
এদিকে বিকেলে বৈবিছাআর ফেসবুক পেজে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নৈতিক স্খলনজনিত কারণে মোহাম্মদপুর থানার আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম রাব্বিকে সংগঠনের কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, গতকাল ধানমন্ডিতে পুলিশের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের বাকবিতণ্ডার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে।
আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া বরদাশত করা হবে না: ডিএমপি
এদিকে, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করলে তা কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
২০ মে সন্ধ্যায় পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ডিএমপির মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স শাখার উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২০ মে রাত সাড়ে ১২টার দিকে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন আসে যে রাজধানীর ধানমন্ডি ৪ নম্বর সড়কের একটি বাড়িতে কয়েকজন ব্যক্তি জোরপূর্বক প্রবেশের চেষ্টা করছে।
সংবাদ পাওয়ার পর ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সঙ্গীয় ফোর্সসহ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান। সেখানে উপস্থিত ১৫-২০ জন ব্যক্তি বাড়িটিতে প্রবেশের চেষ্টা করছিলেন। পুলিশ তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলে তারা উত্তেজিত ও মারমুখী আচরণ করেন।
তারা মো. গোলাম মোস্তফা নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশের ওপর চাপ প্রয়োগ করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তিনজনকে থানায় নিয়ে যায়।
পরবর্তীতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত না হওয়ার শর্তে তাদের ২০ মে বিকেলে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে পুলিশকে দায়িত্ব পালনে সহযোগিতা করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করা হচ্ছে।
এছাড়া কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কাউকে হয়রানি করলে বা আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করলে তাৎক্ষণিকভাবে ৯৯৯ অথবা নিকটস্থ থানায় জানানোর অনুরোধ জানানো হয়।
ডিএমপি হুঁশিয়ারি দিয়ে জানায়, ভবিষ্যতে কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে তা কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না।