পুলিশ সংস্কারের দাবিতে এনসিপি, বৈষম্যবিরোধীদের আন্দোলনের ঘোষণা

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ক্ষমতার অপব্যবহার ও সাম্প্রতিক অসদাচরণের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ বাহিনীর জরুরি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় নাগরিক দল (এনসিপি), বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের নেতা–কর্মীরা।
বৃহস্পতিবার (৩ জুন) বিকেল ৩টায় চট্টগ্রামের ষোলশহরে এক সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির যুগ্ম প্রধান সংগঠক জুবাইর হাসান এ আন্দোলনের ঘোষণা দেন।
এ ঘোষণার পর সন্ধ্যা ৬টায় ষোলশহর এলাকা থেকে একটি প্রতিবাদ মিছিল শুরু হয়, যাতে তিন সংগঠনেরই কর্মীরা অংশ নেন।
পটিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ এবং স্থানীয় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) অপসারণের দাবিকে কেন্দ্র করে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এনসিপির আরেক যুগ্ম মুখ্য সংগঠক ইমন সৈয়দ, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক খান তালাত মাহমুদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব নিজাম উদ্দিন, যুগ্ম সদস্যসচিব ইবনে হোসাইন জিয়াদ, মুখ্য সংগঠক তাওসিফ ইমরোজসহ আরও অনেকে।
বক্তারা পুলিশ বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক অনিয়ম, রাজনৈতিক প্রভাব ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ তুলে ধরেন এবং নাগরিকদের অধিকার রক্ষায় তাৎক্ষণিক ও কাঠামোগত সংস্কারের আহ্বান জানান।
জুবাইর হাসান বলেন, 'আমরা শুধু বদলি চাই না। ওসি জায়েদ নূরকে স্থায়ীভাবে অপসারণের পরিবর্তে রেঞ্জ অফিসে সংযুক্ত করা হয়েছে। আমরা এটা চাইনি। আমরা চাই ন্যায়বিচার—প্রতীকী বদলি নয়।'

ঘটনার সূত্রপাত হয় গত রাত ৯টার দিকে পটিয়ার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে থেকে ছাত্রলীগের এক নেতাকে আটক করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। পরে তাকে পটিয়া থানা চত্বরে নিয়ে আসা হয়।
তবে ওই ছাত্রলীগ নেতার নামে কোনো মামলা না থাকায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে চায়নি। এ নিয়ে আন্দোলনকারী নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের উত্তেজনা দেখা দেয় এবং পরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে পুলিশ ওই ছাত্রলীগ নেতাকে নিজেদের হেফাজতে নেয়। দুপক্ষের সংঘর্ষে পুলিশসহ ১৫-২০ জন আহত হন।
এর প্রতিক্রিয়ায় বুধবার (২ জুলাই) ওসি আবু জায়েদ মো. নাজমুন নূরের অপসারণ দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা 'পটিয়া অবরোধ' কর্মসূচি শুরু করেন।
বিক্ষোভকারীরা ওইদিন সকাল ৯টা থেকে পটিয়া থানা ঘেরাও করেন এবং পরে ধারাবাহিক মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচির মাধ্যমে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করেন। পরে সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে রেঞ্জ ডিআইজি আহসান হাবীব পলাশের আশ্বাসে প্রায় ৯ ঘণ্টা পর সড়ক ছাড়েন বিক্ষোভকারীরা।
একই দিনে, ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (ডিআইজি)–এর দপ্তরের সামনে জাকির হোসেন রোড তিন ঘণ্টার জন্য অবরোধ করে রাখে আন্দোলনকারীরা।
আন্দোলনকারীরা জানান, চলমান আন্দোলনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত, স্বচ্ছ ও জনমুখী পুলিশিং ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার দিকে জনমত আকৃষ্ট করা এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা সৃষ্টি করা।