পটিয়ায় পুলিশ-বৈষম্যবিরোধীদের সংঘর্ষ: ডিআইজির আশ্বাসে সড়ক ছাড়লেন আন্দোলনকারীরা

চট্টগ্রামের পটিয়া থানার সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাকর্মীদের সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
বুধবার (২ জুলাই) সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে রেঞ্জ ডিআইজি আহসান হাবীব পলাশের আশ্বাসে প্রায় ৯ ঘণ্টা পর সড়ক ছাড়লেন বিক্ষোভকারীরা। আগামীকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার মধ্যে ছাত্রদের ওপর 'পুলিশি হামলার' ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়।
এর আগে সকাল ১০টা থেকে থেকে পটিয়ায় সড়ক অবরোধ করায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
অন্যদিকে, বিকেল ৪টায় চট্টগ্রাম নগরীর খুলশীর জাকির হোসেন সড়ক অবরোধ করায় গুরুত্বপূর্ণ এই পথ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দুই এলাকায় পথচারীরা দুর্ভোগে পড়েছিলেন।
পরে সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে নিজ কার্যালয়ের সামনের সড়কে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের আশ্বস্ত করেন রেঞ্জ ডিআইজি আহসান হাবীব পলাশ। এরপর পৌনে ৭টার দিকে খুলশীর সড়ক অবরোধ এবং ৭টার দিকে পটিয়ার সড়ক অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।
আন্দোলনকারীরা পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জায়েদ মো. নাজমুন নূর, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পটিয়া সার্কেল) মো. আরিফুল ইসলামকে অপসারণ ও ছাত্রদের ওপর হামলার ঘটনার বিচার দাবি করেন। এছাড়া, পুলিশ সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষণাও দেওয়া হয়।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম মুখ্য সংগঠক জোবাইরুল হাসান আরিফ সাংবাদিকদের বলেন, 'একজন চিহ্নিত ছাত্রলীগকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে, যেন মব সৃষ্টি না হয়। অথচ পুলিশ উল্টো মব সৃষ্টি করে ছাত্রদের ওপর হামলা চালিয়েছে।'
তিনি বলেন, 'আমরা এ ঘটনায় পটিয়া থানার ওসি, সার্কেল এএসপির অপসারণ চেয়েছি। ডিআইজি আগামীকাল বেলা ১২টার মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানোর আশ্বাস দিয়েছেন। এরপর দাবি পূরণ না হলে আমরা গোটা চট্টগ্রাম ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা করব।'
চট্টগ্রাম অতিরিক্ত ডিআইজি সঞ্জয় সরকার সাংবাদিকদের বলেন, 'পটিয়ার ঘটনায় ছাত্রদের দাবি-দাওয়া ডিআইজি মহোদয় শুনেছেন। আগামীকাল বেলা ১২টার মধ্যে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।'
এর আগে, গত মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে পটিয়ার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে থেকে ছাত্রলীগের এক নেতাকে আটক করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। পরে তাকে পটিয়া থানা চত্বরে নিয়ে আসা হয়।

তবে ওই ছাত্রলীগ নেতার নামে কোনো মামলা না থাকায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে চায়নি।
এ নিয়ে আন্দোলনকারী নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের উত্তেজনা দেখা দেয় এবং পরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে পুলিশ ওই ছাত্রলীগ নেতাকে নিজেদের হেফাজতে নেয়। এসময় দুপক্ষের সংঘর্ষে পুলিশ ১৫-২০ জন আহত হয়েছেন।
পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জায়েদ মো. নাজমুন নূর আজ দুপুরে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস) বলেন, 'মঙ্গলবার রাতে মিছিল নিয়ে থানায় আক্রমণ করা হয়। জানালার গ্লাস ভাঙচুর করা হয়। এসময় থানায় ৭-৮ জন রিমান্ডের আসামি ছিলেন। পুলিশসহ সবার নিরাপত্তা জন্য আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছি।'
এদিকে 'পুলিশি হামলার' প্রতিবাদে ও ওসির অপসারণের দাবিতে বুধবার সকাল ১০টা থেকে থানার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।
পরে তারা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ব্লকেড করে রাখে। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
অন্যদিকে, বিকাল ৩টার দিকে নগরীর খুলশীর জাকির হোসেন সড়কে চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ের সামনে আসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাকর্মীরা।
ডিআইজি তাদের একটি দলকে অফিসে দ্বিতীয় তলায় এসে আলোচনার আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু আন্দোলনকারীরা তা প্রত্যাখ্যান করে ডিআইজিকে অফিসের নিচে নেমে আসার আহ্বান জানান।
তিনি না আসলে বিকাল ৪টার দিকে ডিআইজি কার্যালয়ের বাইরে মূল সড়ক অবরোধ করেন। এসময় যান চলাচল বন্ধ করায় বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষ।
নগরীর ইস্পাহানী স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্র তানজীরুল ইসলাম মাশরুর টিবিএসকে বলেন, 'পরীক্ষা শেষে বাসায় ফিরতে গিয়ে আটকে গেছি। আমার বাসা পশ্চিম খুলশীতে। বাসায় ফিরতে পারছি না।'