ভারি বৃষ্টিতে জলাবদ্ধ সিলেট, প্লাবিত জাফলং

সিলেট নগরে মঙ্গলবার (২০ মে) ভোর থেকে শুরু হওয়া ভারি বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে অন্তত ২০টি এলাকায়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী। অপরদিকে, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জাফলংসহ সিলেটের কয়েকটি উপজেলায় নদীতীরবর্তী এলাকাগুলো প্লাবিত হয়েছে।
সকালে মাত্র কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে নগরের উপশহর, তেররতন, সোবহানীঘাট, তালতলা, মাছুদিঘির পাড়, ছড়ার পাড়, মণিপুরী রাজবাড়ি, শেখঘাট, ঘাসিটুলা, বাবনা ও স্টেশন রোডসহ অনেক এলাকা পানির নিচে চলে যায়। বাড়িঘর ও দোকানপাটেও পানি ঢুকে পড়ে।
নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দারা আগে থেকেই জলাবদ্ধতার আশঙ্কায় ছিলেন। সকালেই তা বাস্তবে রূপ নেয়। তালতলা এলাকার বাসিন্দা কায়সার আহমদ বলেন, "সকালের বৃষ্টিতে আমার ঘরে পানি ঢুকে যায়। অফিস, বাচ্চাদের স্কুল বাদ দিয়ে ঘরের পানি সেচে পরিষ্কার করতে হয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিতীয়বার পানি ঢুকলো। অথচ এখনও বর্ষাকাল আসেনি।"
সিলেট আবহাওয়া অফিস জানায়, ভোর ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত শহরে ১৬৯ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে ভোর ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত ১০১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় সিলেট ও ভারতের মেঘালয় অঞ্চলে আরও মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।
জলাবদ্ধতা সিলেট নগরের দীর্ঘদিনের সমস্যা হলেও এখনও কার্যকর সমাধান আসেনি। সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) জানায়, ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার পর কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হলেও বাস্তবায়নে তেমন অগ্রগতি হয়নি।
সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, "দুই বছর আগের বন্যার পর নিম্নাঞ্চলের নাগরিকদের সুরক্ষায় নদীতীর সংরক্ষণ ও সেচ প্রকল্প নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু এসব এখনো আলোচনার পর্যায়েই আছে।"
অন্যদিকে, ভারি বৃষ্টির পাশাপাশি পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে সিলেটের অন্যতম পর্যটন এলাকা জাফলং। সোমবার সকাল ১০টার দিকে ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা ঢলে পিয়াইন নদীতে প্রবল স্রোতের সৃষ্টি হয়। এতে জিরো পয়েন্টসহ আশপাশের এলাকা দ্রুত পানির নিচে চলে যায়।
নদীর পানির প্রবল স্রোতে জাফলংয়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে স্থানীয় বসতি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হুমকির মুখে পড়ে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছে যায়। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সব ধরনের পর্যটন কার্যক্রম। স্থানীয়দের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।
জাফলং ছাড়াও গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলার নদীতীরবর্তী কিছু এলাকায় কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে নদ-নদীর পানি আরও বাড়তে পারে এবং বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে।
পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগকে 'ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা' ঘোষণা করে আকস্মিক বন্যা সতর্কতা জারি করেছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, সেনাবাহিনী ও রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবক দল।
এদিকে, সুরমা, কুশিয়ারা ও সারি নদীতেও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।