আজকালের মধ্যে ইশরাককে শপথ না পড়ালে আন্দোলন অন্য রূপ নেবে: সালাহউদ্দিন আহমদ

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ হুঁশিয়ার করে বলেছেন, আজ বা কালকের মধ্যে ইশরাক হোসেনকে শপথ গ্রহণ করানো না হলে চলমান আন্দোলন ভিন্ন পথে মোড় নেবে।
সোমবার (১৯ মে) বিকেলে সিলেট জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন বলেন, "আমরা সরকারকে সমর্থন দিয়েছি মানে এই নয় যে তারা যা খুশি তাই করবে। আমাদের সরকার ঘোলা করে পানি খায়।"
তিনি বলেন, "নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুললেই অন্তর্বর্তী সরকার নারাজ হয়। তবে দ্রুত নির্বাচন না হলে প্রধান উপদেষ্টার সম্মান রক্ষা পাবে কি না, সেটিই এখন প্রশ্ন।"
আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, "তাদের রাজনৈতিক মৃত্যু হয়েছে ঢাকায়, দাফন হয়েছে দিল্লিতে। তারা যেন বিএনপিতে অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সবাইকে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।"
সালাহউদ্দিন আরও বলেন, "বিএনপি জনগণের দল। বিএনপি থাকলে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব থাকবে। বিএনপি দুর্বল হলে বাংলাদেশ দুর্বল হবে। এই দল না থাকলে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র আসত না, সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেত না, তত্ত্বাবধায়ক সরকার চালু হতো না। তাই বিএনপি স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পাহারাদার।"
তিনি বলেন, "বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী এবং নিজেকে বাংলাদেশি পরিচয় দিতে প্রস্তুত এমন ব্যক্তিই বিএনপির সদস্য হতে পারেন। বিএনপি দেশের প্রতিটি ধূলিকণাকে ধারণ করে। আমাদের কি এতই সংকট যে আওয়ামী লীগ থেকে সদস্য নিতে হবে? যাদের ডিএনএতে গণতন্ত্র নেই, তাদের কেন আমন্ত্রণ জানাতে হবে বিএনপির সদস্য হতে?"
তিনি আরও বলেন, "গত বছরের ৫ আগস্টে জনগণ আওয়ামী লীগকে বিতাড়িত করেছে। এই দল ইতিহাসের ঘৃণিত গণহত্যাকারী। তারা এখনও নিজেদের অপকর্মের জন্য অনুশোচনা করেনি, বরং গণঅভ্যুত্থানে আন্দোলনকারীদের দুষ্কৃতকারী বলছে। তারা কিভাবে দেশের রাজনীতি করবে?"
তিনি বলেন, "যারা জনগণকে হত্যা, গুম, অপহরণ করেছে, তাদের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। বাংলাদেশে আর যেন কোনো স্বৈরশাসক বা ফ্যাসিবাদী শক্তি জন্ম নিতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।"
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির কোষাধ্যক্ষ এম রাসেদুজ্জামান মিল্লাত বলেন, সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কার্যক্রম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৮ বছর বয়স হয়েছে কিন্তু কোনো দলের সদস্য নন—এমন যারা দলের নীতিতে বিশ্বাস করেন, তারাই নতুন সদস্য হবেন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শে বিশ্বাসী এবং খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আস্থাশীল ব্যক্তিরাই সদস্য হতে পারবেন।
তিনি আরও বলেন, "প্রতিটি ফরমের সঙ্গে একটি ঘোষণা পত্র রয়েছে, তা পূরণ করে সদস্য হতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও সদস্য সংগ্রহ করতে হবে, তবে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ যেন সদস্য হতে না পারে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।"
সিলেট জেলা ওলামা দলের আহ্বায়ক মাওলানা নুরুল হকের কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সভার সূচনা হয়। স্বাগত বক্তব্য দেন সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী। সূচনা বক্তব্য রাখেন দলের দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য তারিকুল আলম তেনজিন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) আলহাজ জিকে গউস। তিনি বলেন, "হাসিনামুক্ত বাংলাদেশ গঠনে শহীদ জিয়ার আদর্শে উজ্জীবিত তরুণদের সদস্য করা হবে। তবে ফ্যাসিস্টদের দোসররা যেন দলের ভেতরে ঢুকতে না পারে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।"
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন—জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি এম নাসের রহমান, মিজানুর রহমান চৌধুরী, সাবেক এমপি শেখ সুজাত মিয়া, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও নির্বাহী কমিটির সদস্য কয়সর এম আহমদ, সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, মৌলভীবাজার জেলা আহ্বায়ক ফজলুল করিম ময়ুন এবং হবিগঞ্জ জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক মিজানুর রহমান।
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন—জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাদিয়া চৌধুরী মুন্নী, সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, মৌলভীবাজার জেলা সদস্য সচিব আব্দুর রহিম রিপন এবং সুনামগঞ্জ জেলা সদস্য সচিব আব্দুল হক।