আ.লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত: নেতিবাচক আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া আসবে মনে করে না সরকার

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম রোববার বলেছেন, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তে কোনো নেতিবাচক আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া আসবে বলে তারা মনে করছেন না।
ইউএনবির এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'গণতান্ত্রিক বিশ্বের এরকম নির্লজ্জ খুনি, গণতন্ত্রবিরোধী ও দুর্নীতিগ্রস্ত একটি দলের পক্ষে কেউ কথা বলবে না। কাজেই আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তে আন্তর্জাতিকভাবে কোনো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া আসবে বলে মনে করছি না।'
শনিবার রাতে বিশেষ বৈঠকে উপদেষ্টা পরিষদ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগ ও এর নেতাদের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত সাইবারস্পেসসহ দলটির যাবতীয় কার্যক্রম সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়।
রোববার দিবাগত রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে সাংবাদিকদের ব্রিফ করার সময় আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার ফলে আন্তর্জাতিক মহলের প্রতিক্রিয়া কেমন হতে পারে—এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিশ্ব হা-হুতাশ করবে বলে মনে করেন না তিনি।
'জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য এই নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজনীয় ছিল,' বলেন তিনি।
তিনি বলেন, পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলোতেও মানবতাবিরোধী অপরাধ ও মূল জাতীয় স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ড জন্য শুধু রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম নয়, গোটা রাজনৈতিক দলকেই নিষিদ্ধ করার নজির আছে।
'দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানি ও ইতালি নাৎসি ও ফ্যাসিস্ট দলগুলোকে নিষিদ্ধ করেছিল। স্পেন ও বেলজিয়ামেও বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতার কারণে কিছু রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ হয়,' বলেন শফিকুল আলম।
প্রেস সচিব আরও বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের (ইউএনএইচসিএইচআর) প্রতিবেদনে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয়েছে, আওয়ামী লীগ, দলটির নেতাকর্মী ও সহযোগী সংগঠনগুলো নৃশংস মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিল।
এছাড়া এই দল বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও নির্বাচনি প্রক্রিয়ার ব্যাপক ধ্বংস সাধন করেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
'তাদের নেতা ও সমর্থকরা ব্যাংক লুট করে বিদেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছে,' বলেন প্রেস সচিব।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকের পর আইন উপদেষ্টা বলেন, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ-সংক্রান্ত পরিপত্র আগামী কার্যদিবসে জারি করা হবে।
ওই সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনে সংশোধনী অনুমোদন করা হয়েছে।
সংশোধনী অনুযায়ী, এখন থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যেকোনো রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সহযোগী গোষ্ঠীকেও শাস্তির আওতায় আনতে পারবে।
এছাড়াও আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত ও প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান আসিফ নজরুল।
এর আগে শুক্রবার সরকার জানায়, মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত সংগঠন ও রাজনৈতিক দলগুলোর বিচার নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনে সংশোধনী আনা হবে।