বান্দরবানে খিয়াং নারী হত্যা: জড়িতদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ-সমাবেশ

বান্দরবানের থানচি উপজেলার তিন্দু ইউনিয়নে খিয়াং সম্প্রদায়ের এক নারীকে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জেলার বিভিন্ন সংগঠন।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে শহরে রাজার মাঠ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয় হয়। মিছিলটি উজানী পাড়া, মধ্যম পাড়া এবং বাজার এলাকা হয়ে প্রেস ক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে এক প্রতিবাদ সমাবেশ করেন তারা।
গতকাল সোমবার বিকালে থানচি-লিক্রি নির্মাধীন সড়কে তিন্দু ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মংখয় পাড়ার বাসিন্দা চিংমা খিয়াংয়ের লাশ উদ্ধার করা হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।
সমাবেশে খিয়াং স্টুডেন্টস ইউনিয়নের সংগঠক উসিচিং খিয়াং বলেন, নিহত ওই নারী তিন সন্তানের মা ছিলেন। তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এর আগেও সম্প্রতি রোয়াংছড়িতে এক খিয়াং কিশোরীকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে এবং রাঙ্গামাটির কাউখালীতে মারমা তরুণীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। একটা ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে আরেকটি ঘটনা ঘটছে। এ সব ঘটনা সঠিকভাবে বিচার না হওয়ায় ধর্ষণ ও হত্যার মত ঘটনা বারবার ঘটছে।
বাংলাদেশ তঞ্চঙ্গ্যা ওয়েলফেয়ার ফোরাম সংগঠনে বিটনময় তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, পাহাড়েও এখন খুন-ধর্ষণের মতো ঘটনা নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। নারীদের আগের মতো নিরাপত্তা নেই। বিশেষ করে বহিরাগত আগমনের ফলে এ ধরনের ঘটনা আগের তুলনায় বাড়ছে।
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি উলিসিং মারমা বলেন, দেশে এখনও বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলছে। তার ধারাবাহিকতায় পাহাড়েও নারী ধর্ষণের মতো ঘটনা বাড়ছে। অপরাধীকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দেওয়া পর্যন্ত এ ধরনের ঘটনা বারবার হতে থাকবে। শিশু-নারীদের নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে অপরাধীদের বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার থাকতে হবে।

সাবেক ছাত্রনেতা জন ত্রিপুরা বলেন, একদিকে নারীরা ঘরে এবং ঘরের বাইরে বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়ে খুন হতে হচ্ছে। অথচ ৫ আগস্ট পরবর্তী দেশে নাগরিকদের সুরক্ষার দেওয়ার জন্য ১১টি কমিশন গঠন করা হয়েছে। তার মধ্যে শুধু নারী কমিশনকে টার্গেট করে তাকে বাতিল করার জন্য এক শ্রেণির মানুষ উঠে পড়ে লেগেছে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব নারী-শিশুদের নিরাপদ রাখতে নারী কমিশনের সুপারিশকে বাস্তবায়ন করার সুযোগ দিতে হবে।
অনন্যা কল্যাণ সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক ও মানবাধিকার কর্মী ডনাইপ্রু মারমা নেলী বলেন, অপরাধী যে হোক তাকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
সমাবেশ জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অংচমং মারমা, উন্নয়ন কর্মী লেলুং খুমী, মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের প্রতিনিধি উমংসিং মারমা, বম ছাত্র সংগঠনের সভাপতি জেমস বম সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন।
সমাবেশে নারী সংগঠনের মধ্যে অংশ নেন খিয়াং কল্যাণ সংস্থা, দুর্বার নেটওয়ার্ক, সৃজন বান্দরবান, উইমেন অ্যাক্টিভিটি এবং উইমেন রিসোর্স অ্যাক্টিভিটি কর্মীরা। এছাড়া এ ঘটনার প্রতিবাদে রুমা ও থানচি উপজেলাতেও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা।
সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে: জেলা প্রশাসন
এদিকে আজ বেলা ১১টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি জানান, ঘটনাটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। জড়িতদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, এ ঘটনার সঠিক কারণ অনুসন্ধানের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। সঠিক কারণ অনুসন্ধান করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, গতকাল সোমবার সকালে বাড়ি থেকে নিজের জুমক্ষেতে ধানের চারা রোপণ করতে যান ওই নারী। দুপুর পেরিয়ে গেলে বাড়ি না ফেরায় তার স্বামীসহ পাড়ার লোকেরা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ওই নারীকে একটি পাথরে নালার ওপর মাথা ও মুখমণ্ডলের বিভিন্ন জায়গায় জখম ও ক্ষত অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়। তাকে পাথর দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ।