আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে সমাবেশে যে বক্তব্য রাখলেন এনসিপি নেতারা

আওয়ামী লীগের বিচার ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশ শুরু হয়েছে। সমাবেশে যোগ দিতে শুরু করেছেন নেতাকর্মীরা।
আজ শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর থেকেই বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে এনসিপির নেতাকর্মীরা জমায়েত হতে শুরু করেন।

সমাবেশে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদ বলেন, আওয়ামী লীগের ইতিহাস কি অজানা? '৭১ এর পরে রক্ষীবাহিনী চালিয়েছিল গণহত্যা, শেখ মুজিবের অপশাসন নিয়ে এসেছিল দুর্ভিক্ষ। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসেই ভারতের তাবেদারি শুরু করেছিল। এদেশের হাজারো ছাত্র-জনতা নিহত হয়েছে হাসিনার আমলে।
তিনি বলেন, 'একটি রাজনৈতিক দল হওয়ার মতো কোনো বৈশিষ্ট্য আওয়ামী লীগের নেই। তাই এই সন্ত্রাসী সংগঠনকে নিষিদ্ধ করতে হবে। প্রধান উপদেষ্টাকে বলতে চাই, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেবে শহীদ ও আহতদের পরিবার। তাদের জিজ্ঞাসা করলেই তারা বলে দেবেন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় সেটা বাস্তবায়ন হবে।'
আরও পড়ুন: অভ্যুত্থানের ৯ মাস পরও আ.লীগ নিষিদ্ধে মাঠে নামা আমাদের সামষ্টিক ব্যর্থতা: নাহিদ
দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনীম জারা বলেন, 'আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সব সংগঠনের বিচার করতে হবে। তার আগে আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব না। এটা বাংলাদেশের মানুষের সিদ্ধান্ত।'
জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, 'আওয়ামী লীগের ইতিহাস মানেই বিরোধীদলের ওপর দমন-পীড়ন ও হত্যাকাণ্ডের ইতিহাস। প্রতিবেশী দেশের সাথে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করে ৫৭ জন সেনাবাহিনী অফিসার, শাপলা চত্বরে আলেম-ওলামাদের হত্যার হত্যার ইতিহাস। আওয়ামী লীগ আবারো রাজনীতির সুযোগ পেলে আবারো গণহত্যা করবে। তাদের রাজনীতিতে ফেরানোর চেষ্টা করা হলে এদশের লাখো ছাত্র-জনতা, কৃষক-শ্রমিক প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।'
মুখ্য সংগঠক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, '৭২ এর মুজিববাদী সংবিধানের মধ্য দিয়ে ভারতীয় এক্সটেনশন বাংলাদেশে এসেছিল। এই সংবিধান যতদিন থাকবে, ততদিন আওয়ামী লীগ বারবার ফিরে আসার চেষ্টা করবে। গণপরিষদের মাধ্যমে নতুন সংবিধান তৈরি না করলে বাংলাদেশের হাজারো ছাত্র-জনতার জীবন হুমকির মধ্যে থাকবে। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের নেতৃত্বের প্রশ্ন যদি আসে, তবে এই ছাত্ররাই বাংলাদেশের নেতৃত্বে আসবে।'
তিনি আরও বলেন, 'যারা বিগত ১৫ বছরে ব্যাংক ব্যবসা, চাঁদাবাজি করেছে, জনগণ তাদেরকে পার্লামেন্টে দেখতে চায় না। ৫ আগস্টের পর জনগণ দুই পরিবারের রাজনীতি দেখতে ইচ্ছুক না। আগামীর রাজনীতি হবে জনগণের রাজনীতি।'
পাড়া-মহল্লায় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের মঞ্চ বানিয়ে আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিকভাবে নিষিদ্ধ না করা পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকবেন বলেও এ সময় ঘোষণা দেন দলের এই এনসিপি নেতা।
মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, 'আজকের এই মঞ্চ থেকে একটি কথাই বলবো, আহত-নিহতদের রক্তের ওপর বসেই অধ্যাপক ড. ইউনূস ক্ষমতায়। আমরা কোনো অনুরোধ করতে চাইনা। আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত জানাতে এসেছি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে।'
মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বলেন, 'আমাদের এই লড়াই ততদিন চলবে, যতদিন খুনী সংগঠন আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হবে।'
সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, 'আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশে রাজনীতি করতে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধা কোথায়? ৫ আগস্ট বাংলাদেশের জনগণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে মুজিববাদের নামে, নৌকার নামে আর কোনো রাজনীতি চলবে না। বাংলাদেশে যতদিন জুলাই প্রজন্ম বেঁচে থাকবে, ততদিন আওয়ামী লীগ প্রাসঙ্গিক হতে পারবে না।'
তিনি বলেন, 'শুধু আওয়ামী লীগই নয়, তাদের দোসর রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক ও বিচারকদের বিচার করতে হবে। আমরা প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের কাছে আহ্বান জানাবো আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে।
এর আগে, দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় এ কর্মসূচিতে সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
ভিডিওবার্তায় তিনি বলেন, '২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশের মাটি থেকে উৎখাত করা হয়। কিন্তু এখনো এই দলের ব্যানারে সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।'

নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেন, 'অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা বা বিচার প্রক্রিয়া শুরুর ক্ষেত্রে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। অথচ আমরা বারবার বলেছি, এই দলের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা জরুরি।'
তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগের বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন তাদের রাজনৈতিক নিবন্ধন বাতিল করে সংগঠনের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে। আমরা গণঅভ্যুত্থানের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নেই রাজপথে নামছি।'