স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের প্রস্তাবে একমত রাজনৈতিক দলগুলো: আলী রীয়াজ

স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ।
তিনি বলেন, 'পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হয়েছে। গঠন প্রক্রিয়া কী হবে, তা নিয়ে আলোচনা চলবে। একটি স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের মাধ্যমে আমরা পুলিশ বাহিনীর জবাবদিহিতা, দায়বদ্ধতা ও জনবান্ধবতা নিশ্চিত করতে চাই।'
রোববার (২৭ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের সংলাপের ১৯তম দিনে এসব তথ্য জানান কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ।
এবিষয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, 'রাজনৈতিক দলগুলো বাংলাদেশ পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে ঐক্যমত হয়েছে। অতীতে পুলিশকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে এ কারণে পুলিশকে জনবান্ধন ও জবাবদিহিতার জন্য একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছে।'
এসময় আখতার হোসেন বলেন, 'এই কমিশন পুলিশের বিরুদ্ধে জনগণের কোনো অভিযোগ থাকলে এবং পুলিশের অভ্যন্তরীণ বিষয়েও যে কেউ অভিযোগ করতে পারবে। এখন এটাকে একটা ফোর্স হিসেবে দেখা হয় আমরা সেটাকে সার্ভিস হিসেবে দেখতে চাই।'
তিনি বলেন, 'পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে আইন প্রণয়নের বিষয়টি এখনও স্পেসিফিক হয়নি। নীতিগতভাবে আমরা একমত যে এটা ফাংশন করা প্রয়োজন। তারা তদন্ত ও সুপারিশ করার সক্ষমতা রাখবে।'
তিনি আরও বলেন, 'আওয়ামী লীগ পুলিশকে পুলিশ লীগ হিসেবে কায়েম করেছিল। এজন্য আমরা কোনো গোষ্ঠী বা কোনো দল যদি পুলিশের ওপর আইনানুগ নিয়মের বাইরে চাপ তৈরি করে তাহলে পুলিশের পক্ষ থেকেও কমিশনে অভিযোগ আসতে পারে।'
সংবিধানের মূলনীতি নিয়ে আখতার হোসেন বলেন, 'আমরা মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্রে উল্লেখিত সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার এর পক্ষে।'
জুলাই সনদের বিষয়ে তিনি বলেন, 'আমরা যদি দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে আলোচনা করতে পারি তাহলে জুলাই মাসের মধ্যে সনদ প্রণয়ন করা যেতে পারে। এজন্য রাজনৈতিক দলের সদিচ্ছা দরকার।'
নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার বিষয়ে তিনি বলেন, 'একদলের সঙ্গেই আলোচনা করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হলে সেটি গ্রহণযোগ্য হবে না। সবার সঙ্গেই আলোচনা করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে হবে। এর আগে মাঠ প্রশাসনের নিরপেক্ষতা, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। জুলাই সনদ ও ঘোষণা করার পরেই নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা যেতে পারে।'
পুলিশ কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়, পুলিশ বাহিনী যেন একটি শৃঙ্খলিত বাহিনী হিসেবে আইনসম্মত ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে, তা নিশ্চিত করা হবে কমিশনের অন্যতম লক্ষ্য। একই সঙ্গে পুলিশ সদস্য ও সাধারণ নাগরিক—উভয়পক্ষের অভিযোগ নিষ্পত্তির দায়িত্বও এই কমিশনের ওপর ন্যস্ত থাকবে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, বাংলাদেশ পুলিশ কমিশন [যা 'কমিশন' হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে] গঠিত হবে একজন অবসরপ্রাপ্ত আপিল বিভাগের বিচারপতির নেতৃত্বে, যিনি ৭২ বছরের নিচে হবেন।
কমিশনের সদস্য সচিব হবেন অবসরপ্রাপ্ত একজন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (অ্যাডিশনাল আইজিপি) পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তা, যিনি ৬২ বছরের নিচে থাকবেন। কমিশনে সরকার ও বিরোধী দল উভয়পক্ষের প্রতিনিধিত্ব থাকবে। এদের মধ্যে থাকবেন—সংসদে সরকার দলের নেতা (লিডার অব দ্য হাউস), বিরোধীদলীয় নেতা, জাতীয় সংসদের স্পিকার এবং ডেপুটি স্পিকার (যিনি বিরোধীদল থেকে হবেন) একজন করে প্রতিনিধি।
এছাড়া একজন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, যিনি হাইকোর্ট বিভাগে অন্তর্ভুক্ত এবং কমপক্ষে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একজন মানবাধিকার কর্মী, যিনি কমপক্ষে ১০ বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এবং একজন অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত আইজিপি পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তা সদস্য হিসেবে থাকবেন।
খসড়ায় বলা হয়েছে, কমিশনের অন্তত দুইজন সদস্য নারী হতে হবে। কিছু নির্ধারিত সদস্য বাছাইয়ের জন্য একটি বাছাই কমিটি গঠনের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে, যার সদস্য থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এবং ১০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক।
কমিশনের চেয়ারপারসন ও সদস্য সচিব পূর্ণকালীন দায়িত্ব পালন করবেন, বাকি সাতজন সদস্য স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তবে বৈঠকে উপস্থিতি ও অন্যান্য দাপ্তরিক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী সম্মানী বা ভাতা গ্রহণ করতে পারবেন।
জামায়াত ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান বলেন, সংবিধানের ৫ম সংশোধনী অনুসারে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনার বিষয়ে অধিকাংশ দল একমত। পাশাপাশি সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার এবং ধর্মীয় সম্প্রীতি ও স্বাধীনতা নিয়ে একমত এসেছে।
তিনি আরও বলেন, স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়েও আমরা কমিশনের প্রস্তাবে একমত হয়েছি।