চলতি বছরের মধ্যে দেশে মুক্তবাণিজ্য অঞ্চল গঠনে জাতীয় কমিটি গঠন

চলতি বছরের মধ্যেই দেশে ফ্রি ট্রেড জোন (এফটিজেড) বা মুক্তবাণিজ্য অঞ্চল ঘোষণার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন।
বুধবার বেজা থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
চৌধুরী আশিক বলেন, জাতীয় কমিটির কার্যকর সমন্বয় এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সক্রিয় সহযোগিতা পেলে এ বছরেই মুক্তবাণিজ্য এলাকা ঘোষণা করা সম্ভব হবে। গ্লোবাল ম্যানুফ্যাকচারিং হাব (বৈশ্বিক উৎপাদনকেন্দ্র) হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে এই মুক্তবাণিজ্য অঞ্চল (এফটিজেড) হবে একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ।
বেজা জানায়, অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দক্ষতা উন্নয়ন, অর্থনীতি ও রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনয়ন, আঞ্চলিক উন্নয়নসহ নানাবিধ কারণে বর্তমান বিশ্বে মুক্ত বাণিজ্য এলাকা অত্যন্ত জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে এফটিজেড স্থাপনের বিষয়টি পর্যালোচনা করতে বেজার উদ্যোগে গত ২১ এপ্রিল একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটিতে বেজা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, শিল্প মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও বিডা-এর প্রতিনিধিবৃন্দকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন এবং বিডা ও বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যানের যৌথ নেতৃত্বে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে।
উল্লিখিত কমিটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চল আইন, কাস্টমস আইন, আমদানি ও রপ্তানি আইনসহ সংশ্লিষ্ট সকল আইন, বিধি ও বিধান পর্যালোচনা করবে এবং মুক্তবাণিজ্য এলাকা স্থাপনে সহায়ক এমন আইন, বিধি ও নীতিমালা প্রণয়ন বা সংশোধন করবে। কমিটি সফলভাবে এফটিজেড পরিচালনা করা দেশগুলোর মডেল, আইন, নীতি ও প্রণোদনা পর্যালোচনা করবে এবং সে আলোকে বাংলাদেশে এফটিজেড স্থাপনের জন্য অনুসরণীয় কাঠামোর খসড়া প্রস্তুত করবে।
এছাড়া, সম্ভাব্য উপযুক্ত স্থানসমূহ নির্বাচন এবং ওই স্থানগুলোর প্রাথমিক সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে। এসব স্থানগুলোর ভৌগোলিক, অবকাঠামোগত ও লজিস্টিক সুবিধাও যাচাই করা হবে। কমিটি এফটিজেড স্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট অংশীজন নির্ধারণ করে তাদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় আলোচনা করবে এবং এফটিজেড স্থাপনে প্রাসঙ্গিক অন্যান্য সুপারিশ ও কার্যক্রম তৈরি করবে।
উল্লেখ্য, ৭-১০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ বিনিয়োগ সামিটের অংশ হিসেবে ডিপি ওয়ার্ল্ড-এর সঙ্গে একটি সেনসিটাইজেশন সেমিনার আয়োজন করা হয়, যেখানে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম তুলে ধরা হয়। পরে ডিপি ওয়ার্ল্ডের চেয়ারম্যান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
সামিটে এক সংবাদ সম্মেলনে চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর ঘিরে একটি মুক্তবাণিজ্য এলাকা গঠনের উদ্যোগ নিতে প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে নেপাল, ভুটান ও চীনসহ পার্বত্য উপত্যকার দেশগুলো এর সুবিধা পেতে পারে।
মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল এমন একটি নির্দিষ্ট এলাকা যেখানে শুল্ক কর্তৃপক্ষের সরাসরি হস্তক্ষেপ ছাড়াই পণ্য আমদানি, উৎপাদন এবং পুনঃরপ্তানি করা যায়। বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং শিল্পায়নের পরিবেশ উৎসাহিত করার কারণে মুক্তবাণিজ্য অঞ্চল সফল অর্থনৈতিক অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য কেন্দ্রস্থল হিসেবে সিঙ্গাপুরের সাফল্যের পেছনে রয়েছে সুপরিকল্পিত এফটিজেড স্থাপন, যেমন—জুরং দ্বীপের বন্দর এবং বিমানবন্দরসহ সংযুক্ত এফটিজেড-এর বিশ্বমানের অবকাঠামো এবং পরিষেবার ফলে সিঙ্গাপুর বিশ্বের অন্যতম প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে।
এছাড়া, পৃথিবীর বৃহত্তম এবং সফল এফটিজেড-গুলোর মধ্যে একটি হলো দুবাইয়ের জেবেল আলী ফ্রি জোন এরিয়া। ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ফ্রি ট্রেড জোন, ডিপি ওয়ার্ল্ড কর্তৃক পরিচালিত। মূলত, দুবাইয়ের এই বন্দর পরিচালনার জন্য ডিপি ওয়ার্ল্ড আন্তর্জাতিকভাবে সুনাম অর্জন করেছে।