মাটি সরে যাওয়ায় ধসে পড়ছে পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধ

পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের পুরো দুই কিলোমিটার অংশ ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। তলদেশের মাটি সরে গিয়ে বাঁধের কয়েকটি অংশে গভীরতা সৃষ্টি হওয়ায় কিছু জায়গায় ধস নেমেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)-এর আশঙ্কা, আসন্ন বর্ষায় বাঁধের বিভিন্ন অংশ ভেঙে পড়তে পারে। এতে স্থানীয়দের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম উদ্বেগ।
ভাঙনের ঝুঁকির মুখে রয়েছে নাওডোবা-পালেরচর সড়ক, মঙ্গল মাঝি ও সাত্তার মাদবর বাজার এবং আশপাশের অন্তত ৬০০টি বসতবাড়ি।
গত বছরের নভেম্বরে জাজিরা প্রান্তের নাওডোবা জিরোপয়েন্ট এলাকায় বাঁধের প্রায় ১০০ মিটার অংশ পদ্মায় ধসে পড়ে। এরপর পাউবো ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) যৌথভাবে সমীক্ষা চালায়।
সমীক্ষায় দেখা যায়, বাঁধসংলগ্ন এক কিলোমিটার এলাকায় নদী গভীর হয়ে গেছে এবং তলদেশ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। অন্য এক কিলোমিটার এলাকায় নদী বাঁধের কাছাকাছি চলে এসেছে এবং সেখানেও ভাঙন দেখা দিয়েছে।
পাউবো সূত্র জানায়, শরীয়তপুরের জাজিরার নাওডোবা এলাকায় পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে সেনানিবাস, সার্ভিস এরিয়া-২, দক্ষিণ থানা ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়। এসব অবকাঠামোর জন্য জমি অধিগ্রহণের পর ২০১২ সাল থেকে নদীভাঙন শুরু হয়। এ ভাঙন রোধে ভাটির দিকে দুই কিলোমিটার এলাকায় বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে, যার সঙ্গে পরবর্তীতে নদী শাসনের বাঁধ যুক্ত করা হয়।
গত বছর ধসের পর মাঝিরঘাট এলাকাতেও আরও ১০০ মিটার অংশের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে। পুরো বাঁধের পাশে মহর আলী মাদবরবান্দি, আলম খাঁরকান্দি, ওছিম উদ্দিন মাদবরকান্দি ও কালাই মোড়লকান্দি গ্রাম এবং মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর বাজার অবস্থিত। বাঁধসংলগ্ন নাওডোবা-পালেরচর সড়ক দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ চলাচল করেন।
মাদবরকান্দি গ্রামের রাজু মাদবর বলেন, "বাঁধটি অস্থায়ীভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল। এখন স্রোতের দিক পরিবর্তনে বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। বর্ষায় পুরো এলাকা ভেঙে গেলে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাব। সরকার যেন দ্রুত ব্যবস্থা নেয়, সেই অনুরোধ করছি।"
সাত্তার মাদবর ও মঙ্গল মাঝি বাজারের ব্যবসায়ী বাদশা মিয়া বলেন, "এখানে প্রায় ২০০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। বছরখানেক ধরে বাঁধে ফাটল দেখা দিচ্ছে, কয়েকটি অংশ ইতোমধ্যে ভেঙে গেছে। পানি বাড়লে বাঁধ টিকবে না। আমরা কোথায় যাব?"
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান বলেন, "২০১১-১২ অর্থবছরে পদ্মা সেতু কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড রক্ষায় দুই কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়। সমীক্ষায় দেখা গেছে, এক কিলোমিটারের নিচের অংশ থেকে মাটি সরে গেছে। বাঁধটি বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত। কিছু অংশ ইতোমধ্যে ধসে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত অংশে মেরামত কাজ চলছে। পুরো বাঁধ মজবুত করার জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তা বাস্তবায়ন না হলে বাঁধটি আরও ঝুঁকিতে পড়বে।"
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "পদ্মা সেতুর নিকটবর্তী তীর রক্ষা বাঁধটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ধসের বিষয়টি নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। পুরো বাঁধ মজবুত করার জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে বোর্ডকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।"