পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধে ধস, আতঙ্কে বসতভিটা সরিয়ে নিচ্ছেন জাজিরার বাসিন্দারা

পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের ২০০ মিটার অংশ পদ্মায় ধসে পড়েছে। গতকাল শনিবার দুপুর ১২টায় শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবার আলমখার কান্দি ও মাদবরকান্দি এলাকায় এই ভাঙন হয়।
গত দুই সপ্তাহ ধরে পদ্মা নদীতে পানি বাড়ছে। নদীতে স্রোত থাকায় বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন শুরু হওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন স্থানীয়রা।
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান বলেন, পদ্মা নদীর বাম তীরে চর পড়ে গভীরতা কমে গেছে। এখন মূল পানি প্রবাহিত হচ্ছে জাজিরার এই ডান তীর ঘেঁষে। নদীর এই চ্যানেল এখন অনেক গভীর এবং পানির স্রোতও রয়েছে। এই স্রোত এখন আঘাত হানছে। যার ফলেই ধাপে ধাপে এই ভাঙন।
তিনি আরো বলেন, অস্থায়ীভাবে পাঁচটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। এরপর আমরা একটি সমীক্ষা করেছিলাম, সেখানে পুরো দুই কিলোমিটার বাঁধ এখন ঝুঁকিপূর্ণ। সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর কাজ চলছে। স্থায়ীভাবে তীর রক্ষার প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। অনুমোদন পেলেই কাজ করা হবে।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের আশপাশ থেকে বসতবাড়িসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে অন্তত পাঁচটি বসতঘর দুইটি দোকান সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
আলমখা কান্দির শিরিয়া বেগম ঘরের মালামাল সরিয়ে নেওয়ার কাজ করছিলেন। এ সময় কথা হলে তিনি বলেন, বাঁধ ভেঙে এখন ঘরের দরজায় চলে এসেছে। অন্যত্র চলে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। সবাই যখন ঈদে কোরবানির মাংস খাচ্ছে, আমরা তখন ঘর সরানোর কাজে ব্যস্ত। সন্তানদের মুখে এক টুকরো মাংস তুলে দিতে পারিনি।

ছাতার মাদবর ও মঙ্গল মাঝি বাজারের ফল ব্যবসায়ী ইদ্রিস মিয়া বলেন, বাজারের একটি অংশ নদীতে ভেঙে গেছে। এই বাজারে দুই শতাধিক দোকান ঘর রয়েছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি আর ভাঙন থাকলে আমরা কোথায় যাব? না খেয়ে মরতে হবে আমাদের।
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুর প্রকল্প এলাকা নদীভাঙনের কবল থেকে রক্ষায় ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা নদীর এই তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়।
পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে পদ্মা নদীর ৫০০ মিটারের মধ্যে সার্ভিস এরিয়া ২, সেনানিবাস, পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানাসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। সেসব অবকাঠানো নির্মাণের জন্য যখন জমি অধিগ্রহণ করা হয়, তখন ২০১২ সালের দিকে নাওডোবা এলাকায় পদ্মার ভাঙন শুরু হয়।
পদ্মা সেতুর প্রকল্প এলাকা নদী ভাঙনের কবল হতে রক্ষা করার জন্য তখন সেতু থেকে ভাটির দিকে (পূর্ব দিকে) দুই কিলোমিটার এলাকায় নদীর তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। ওই বাঁধের সাথেই পরবর্তীকালে নদী শাসনের বাঁধ সংযুক্ত করা হয়।
গত বছরের নভেম্বরে নাওডোবার জিরোপয়েন্ট এলাকায় ওই বাঁধের ১০০ মিটার অংশ নদীতে ধসে যায়। এর পর মাঝিরঘাট এলাকায় আরো ১০০ মিটার অংশর বাঁধের নীচ থেকে মাটি সরে গেছে। এছাড়া বাঁধের বিভিন্ন অংশের কাছে নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

গত বছরের নভেম্বরে বাঁধটিতে সমীক্ষা চালায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ)। এতে দেখা যায়, বাঁধের কাছে এক কিলোমিটার অংশে নদী গভীর। সেখানে তলদেশ হতে মাটি সরে যাচ্ছে। আর বাকি ১ কিলোমিটার অংশে বাঁধের কাছে নদী চলে এসেছে। তখন পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধের ভেঙে পড়া অংশে সংস্কারের কাজ শুরু করে। গত মে মাসে জিরো পয়েন্ট এলাকার ১০০ মিটার অংশে ৩৩ হাজার বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে।
এরপরও গতকাল শনিবার ওই জায়গার কাছে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে।