জকিগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, সাদাপাথর পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা

টানা বৃষ্টি ও ভারতের আসাম থেকে থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটের কুশিয়ারা নদীর কয়েকটি স্থানে প্রতিরক্ষা বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বাঁধ ভেঙে সীমান্তবর্তী জকিগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার এলাকার লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। এতে এই দুই উপজেলার অনেক এলাকা তলিয়ে গেছে।
নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে কুশিয়ারার বাঁধে আরও ভাঙন দেখা দেওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
এদিকে, নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ঝুঁকি এড়াতে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাদাপাথর পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। নদীকেন্দ্রিক অন্য পর্যটনকেন্দ্রগুলোতেও পর্যটকদের সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।
জানা যায়, ভারতের আসাম রাজ্যের বরাক উপত্যকায় কয়েকদিন ধরে টানা ভারী বর্ষণ হচ্ছে। এতে দ্রুত বাড়তে থাকে সীমান্ত নদী কুশিয়ারার পানি।
রোববার (১ জুন) দুপুরে জকিগঞ্জ উপজেলায় কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে। আর রাতে উপজেলার পাঁচটি স্থানে নদীর বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে শুরু করে। স্থানীয় প্রশাসন বালুর বস্তা ও মাটি ব্যবহার করে পানি ঠেকানোর চেষ্টা করলেও তা কার্যকর হয়নি।
জকিগঞ্জ উপজেলার মানিকপুর, মাইজকান্দি ও বিরশ্রী এলাকায় বাঁধ উপচে ঢোকা পানির কারণে ঘরবাড়ি, রাস্তা ও কৃষিজমি পানিতে ডুবে গেছে। এছাড়া পানিতে তলিয়ে গেছে জকিগঞ্জ বাজারও।
স্থানীয়রা জানান, রোববার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের রারাই গ্রামের পাশে কুশিয়ারা নদীর ডাইক দিয়ে পানি প্রবেশ শুরু করে। সোমবার ভোররাতে একই ইউনিয়নের বাখরশাল ও সকাল ৮টার দিকে খলাছড়া ইউনিয়নের লোহারমহল গ্রামের পাশে কুশিয়ারা নদীল ডাইক ভেঙে যায়। এতে আশপাশের এলাকায় পানি ঢুকতে শুরু করে।
এ ছাড়া জকিগঞ্জ পৌর শহরের নিকটবর্তী কেছরী গ্রামের পাশে ডাইকের ওপর দিয়ে শহরে ঢুকছে কুশিয়ারার পানি। মাইজকান্দি গ্রামের কাছে ডাইকের একাংশ ধসে পড়েছে নদীতে। জকিগঞ্জ ইউনিয়নের ছবড়িয়া, সেনাপতিরচক, সুলতানপুর ইউনিয়নের ইছাপুর, খলাছড়া ইউনিয়নের একাধিক স্থান, বারঠাকুরী ইউনিয়নের পিল্লাকান্দি ও আমলশীদসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রায় অর্ধশতাধিক জায়গায় ডাইকের ওপর দিয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশের খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয়রা বালু ও মাটি ভর্তি বস্তা ফেলে ডাইক রক্ষায় চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের রারাই গ্রামের প্রায় ১শ ফুট ও বাখরশাল গ্রামে ৪০-৫০ ফুট, খলাছড়া ইউনিয়নের লোহারমহল এলাকার ৩০-৪০ ফুট বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে পার্শ্ববর্তী এলাকা প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় কন্ট্রোল রুম চালু করেছে।
এদিকে, বিয়ানীবাজার উপজেলার কুড়ারবাজার ইউনিয়নের আঙ্গারজুর গ্রামে কুশিয়ারা নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে গেছে। ফলে ওই অঞ্চলের একাধিক গ্রাম ইতোমধ্যেই পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, কুশিয়ারা নদীর অমলশীদ পয়েন্টে পানি ১৬.৮৩ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। যেখানে বিপদসীমা ১৫.৪০ সেন্টিমিটার।
শেওলা পয়েন্টে বিপদসীমা ১৩.০৫ সেন্টিমিটার হলেও, বর্তমানে পানি প্রবাহিত হচ্ছে ১৩.২২ সেন্টিমিটার উচ্চতায়।
ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে নদীর পানি ৯.৪৬ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে, যেখানে বিপদসীমা ৯.৪৫ সেন্টিমিটার।
জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান জানান, প্রশাসন সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে। বন্যা কবলিত এলাকার লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনার প্রস্তুতি চলছে। আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। তবে কতটি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে সেটা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হতে পারেন নি ইউএনও। তবে প্রশাসন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
এদিকে, ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে কোম্পানীগঞ্জের ধলাই নদীর পানি দ্রুত বেড়ে চলছে। এ পরিস্থিতিতে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র সাদাপাথর বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ সময় পানিকেন্দ্রিক ঝুঁকিপূর্ণ পর্যটনকেন্দ্রগুলো এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুন্নাহার বলেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখেই সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্র পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া স্থিতিশীল হলেই পর্যটনকেন্দ্রটি খুলে দেওয়া হবে।