কয়রায় কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধে ভাঙন, হুমকিতে ১৫ হাজার মানুষ

খুলনার কয়রা উপজেলায় কপোতাক্ষ নদের তীরে গুরুত্বপূর্ণ বেড়িবাঁধে ধস দেখা দিয়েছে। শুক্রবার (৩০ মে) ভোরে উপজেলার হরিণখোলা গ্রামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ১৩ ও ১৪/২ নম্বর পোল্ডারের অন্তত পাঁচটি স্থানে প্রায় ৩০০ মিটার বাঁধ নদীতে ধসে পড়ে।
যদিও এখনো পুরো বাঁধটি বিচ্ছিন্ন হয়নি এবং লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেনি, তবে যেকোনো সময় তা পুরোপুরি ভেঙে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ফলে হরিণখোলা, ২ নম্বর কয়রা, গোবরা, ঘাটাখালী, মদিনাবাদসহ কয়রা উপজেলা সদরের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ হুমকির মুখে পড়েছেন।
স্থানীয়দের বরাতে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৪ ফুট উঁচু জোয়ার দেখা দেয়। আজ ভোরে ভাটার সময় পানি নামতে শুরু করলে হঠাৎ করে বাঁধে ফাটল ও ধসের সৃষ্টি হয়। পাউবোর দেওয়া জিও ব্যাগ ও মাটির অংশ মুহূর্তেই নদীতে ধসে পড়ে।
হরিণখোলা গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফিজ শেখ বলেন, 'আমরা স্থানীয়রা নিজেরা মাটি কেটে বাঁধ রক্ষা করছি। সরকার ব্যবস্থা না নিলে এলাকা বাসযোগ্য থাকবে না। বাঁধ রক্ষার দায়িত্ব যাদের, তারা সময়মতো এগোয় না, বিপদে পড়ে মরতে হয় আমাদের মতো গরিব মানুষদের।'
আরেক বাসিন্দা হাফিজুল মোল্লা বলেন, 'মাত্র সাড়ে তিন বছর আগে নির্মিত বাঁধে এখন ধস নামছে। ওপরে ও দুই পাশে মাটি দেওয়া হলেও ভেতরে শুধু বালু দেওয়া হয়েছে। এভাবে বাঁধ টিকবে কীভাবে? পাকা ব্লক না দিলে প্রতিবার জোয়ারেই বিপদ।'
প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২১ সালে নির্মিত বাঁধটি একসময় কয়রার সবচেয়ে মজবুত বাঁধ হিসেবে পরিচিত ছিল বলে জানান গোবরা গ্রামের স্কুলশিক্ষক বিল্লাল হোসেন। তিনি বলেন, 'এখানে প্রকল্প বড় হলেও কাজের মান ছিল নিম্নমানের। আজ সকাল থেকেই ভাঙনের পরিধি বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে পুরো এলাকাই নদীগর্ভে হারিয়ে যাবে।'
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ধসে পড়া অংশে মাটি সরে গিয়ে ভেতরের বালু বেরিয়ে পড়েছে। নদীর স্রোতে সেই বালুও ধুয়ে যাচ্ছে। ফলে পানির গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে বাঁধের ওপর আরও বেশি চাপ সৃষ্টি করছে। স্থানীয়রা নিজেদের উদ্যোগে মাটি ও জিও ব্যাগ ব্যবহার করে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে খুলনা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, 'নিম্নচাপের কারণে অস্বাভাবিক জোয়ার দেখা দেয়। হরিণখোলায় ধস ও চৌকুনিতে উপচে পানি প্রবেশ করেছে। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উপসহকারী প্রকৌশলীরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। আপাতত জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চলছে। স্থায়ী সমাধানের জন্য শিগগিরই ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে বাঁধ সংস্কার শুরু হবে।'