বাংলাদেশের সাড়ে ৩ কোটি শিশু জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিতে রয়েছে: ইউনিসেফ কর্মকর্তা

জাতিসংঘের শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) খুলনা ফিল্ড অফিসের প্রধান কাওসার হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে ৩ কোটি শিশু প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তাদের ঝুঁকিমুক্ত করতে দেশের জাতীয় পরিকল্পনা ও বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে শিশুদের বিষয়টি বিবেচনায় রাখা উচিত। শিশু অধিকার রক্ষায় পরিকল্পনা না করলে ভবিষ্যৎ পৃথিবী অরক্ষিত হয়ে পড়বে।
আজ সোমবার খুলনায় চতুর্থ বার্ষিক জলবায়ু শিশু সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এতে উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ২০০ শিশু অংশগ্রহণ করে।
অনুষ্ঠানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন উপস্থাপিত কী-নোটে বলা হয়, বাংলাদেশে প্রতিবছর ১০ হাজার মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন। আর এই পর্যন্ত প্রায় ১৭ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এর বেশিরভাগ মানুষই উপকূলীয় এলাকা থেকে শহরমুখী হয়েছেন। এর প্রভাবে শিশুরা নানামুখী আঘাত পাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, উপকূলে প্রতিবছরই কোনো না কোনো দুর্যোগে আঘাত হানে। এতে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে ঋণ নেয়। পরে সেই ঋণ শোধ করতে না পেরে কাজের সন্ধানে শহরমুখী হন। একপর্যায়ে পরিবারকেও শহরের দিকে নিয়ে যান তারা।
তিনি জানান, পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে উপকূলের অধিকাংশ স্থানে লবণাক্ততার মাত্রা অনেক বেশি। যার কারণে কৃষিকাজ করা সম্ভব নয়। আর মৎস্য ঘেরগুলো এখনো প্রভাবশালীদের দখলে, সেখানে কর্মের জায়গা খুবই কম। যার ফলে উপকূলের মানুষকে কাজের সন্ধানে প্রতিনিয়ত শহরমুখী হতে হচ্ছে। এর ফলেও বাস্তুচ্যুতি বাড়ছে।
তবে শহরে এসেই তারা উন্নত জীবন যাপন করতে পারছেন না জানিয়ে তিনি বলেন, শহরে খাবার খরচ অনেক বেশি। পাশাপাশি বাসস্থানও অনেক ব্যয়বহুল। এখানে জীবন ধারণ করতে তারা হিমশিম খায়। বেশিরভাগ বস্তি এলাকায় বা সরকারি জমি দখল করে গড়ে ওঠা বাসাতেই ঠাঁই হয়। যেখানে নিরাপদ পানি বা স্যানিটারি সুবিধা অনেক নিম্নমানের। এর ফলে পরিবারের বয়স্করা বাস্তুচ্যুতির প্রভাবে যতটুকু আঘাত পান, শিশুরা তার থেকেও বেশি আঘাত পান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. রেজাউল করিম। তিনি বলেন, যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ৮০ শতাংশই ক্ষতির শিকার হয় নারী ও শিশু। এ ধরনের কর্মসূচির মাধ্যমে দুর্যোগ বন্ধ করা যাবে না তবে ক্ষতি কমানো সম্ভব বলেও বক্তারা উল্লেখ করেন। বিশেষ করে দুর্যোগের আগে ও দুর্যোগ পরবর্তী কর্মপন্থাও নির্ধারণ করা সম্ভব মানুষের সচেতনতার মধ্য দিয়ে। এ ক্ষেত্রে শিশুদের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। বড়রা ভুল করলে শিশুরা পথ দেখাবে, তরুণ প্রজন্ম যে পথ দেখাতে পারে তার বড় প্রমাণ ২০২৪-এর জুলাই গণঅভ্যুত্থান। শিশুরাই বড় প্রাকৃতিক শক্তি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের (পিআইবি) মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ। স্বাগত বক্তব্য দেন জাগ্রত যুব সংঘের (জেজেএস) নির্বাহী পরিচালক এটিএম জাকির হোসেন।