ভর্তুকির চাপ কমাতে ‘সীমিত লোডশেডিং’ এর পরিকল্পনায় সরকার

বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির চাপ কমাতে কিছুটা বা সীমিত পরিসরে লোডশেডিং হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তবে সরকার চেষ্টা করবে তা যেন সহনীয় পর্যায়ে থাকে।
রোববার (২৭ এপ্রিল) বিদ্যুৎ বিভাগের এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সম্প্রতি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ঘটে যাওয়া বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়ে আয়োজিত এ সভায় উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ সচিব ফারজানা মমতাজ, বিপিডিবির প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিমসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বিদ্যুৎ উপদেষ্টা বলেন, "বিপিডিবি আর্থিকভাবে লোকসানে রয়েছে। একইসঙ্গে পেট্রোবাংলারও সংকট রয়েছে। জনগণকে এ বিষয়টি বুঝতে হবে। চাহিদার ভিত্তিতে লোডশেডিংয়ের মাত্রা নির্ধারিত হবে। তাপমাত্রা বাড়লে চাহিদাও বাড়বে। এখন কিছু তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালানো হচ্ছে, প্রয়োজনে আরও চালানো হবে।"
তিনি জানান, গ্যাস সরবরাহেও ঘাটতি দেখা দিয়েছে। আগে পেট্রোবাংলা দৈনিক ১১০০-১২০০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ করলেও বর্তমানে তা কমে ১০৫০-তে দাঁড়িয়েছে। ফলে হঠাৎ করে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না।
ফাওজুল কবির খান বলেন, "শীতাতাপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের (এসি) চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহের সক্ষমতা সরকারের নেই। দেশে গ্যাস উৎপাদন কমছে, আর আমদানি করা এলএনজি রূপান্তরের সক্ষমতাও সীমিত। তাই মাসে আরও দুটি এলএনজি কার্গো আমদানির চেষ্টা চলছে। তবে জ্বালানি বিভাগ বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে এ জন্য অর্থ বরাদ্দ চেয়েছে।"
সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুযায়ী ধাপে ধাপে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে কম দক্ষ ও ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ এবং সিস্টেম লস কমানোর সুপারিশ করেছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হলেও চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬২ হাজার কোটি টাকা।
আইএমএফের সঙ্গে চুক্তির আওতায় সরকার ২০২৬ সালের মধ্যে ধাপে ধাপে বিদ্যুৎ খাত থেকে সব ধরনের ভর্তুকি প্রত্যাহারের অঙ্গীকার করেছে।
কমিটি গঠন
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সম্প্রতি ঘটা বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের তদন্তে আট সদস্যের কমিটি গঠন করেছে মন্ত্রণালয়।
২৬ এপ্রিল বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিট থেকে রাত ৭টা ২২ মিনিট পর্যন্ত গোপালগঞ্জ-আমিনবাজার গ্রিড লাইনে বিপর্যয়ের কারণে খুলনাসহ আশপাশের এলাকায় ব্ল্যাকআউট ঘটে।
বুয়েটের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল হাসিব চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কমিটি ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান, দায়ী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের দায় নির্ধারণ এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে সুপারিশ করবে।
ফাওজুল কবির জানান, "আমিনবাজার-গোপালগঞ্জ ডাবল লাইনে ত্রুটির কারণে ওই বিপর্যয় ঘটে। এতে ৭টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়, যার মোট উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ২,২৭৭ মেগাওয়াট। এর মধ্যে চারটি ছিল কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র।"
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, গ্রিডের ত্রুটিটি আমিনবাজার থেকে প্রায় ৬০ মাইল কিংবা গোপালগঞ্জ থেকে ২০ মাইল দূরে কোথাও ঘটেছে।
রূপপুরের বিদ্যুৎ সঞ্চালনে 'প্রস্তুত' পিজিসিবি
এক প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ উপদেষ্টা জানান, সরকার গ্রিডের স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং অন্যান্য নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হলে গ্রিডের স্থিতিশীলতা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
তিনি বলেন, "রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক কেন্দ্র চালু হলে গ্রিডের স্থিতিশীলতা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। এজন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সহায়তায় ইশ্বরদীতে ৩০ মেগাওয়াট ও ভুলতায় ৯০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাটারি স্টোরেজ স্থাপন করা হচ্ছে।"
রূপপুর প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরুর বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, "পিজিসিবি প্রস্তুত রয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হলে তা সঞ্চালনের সক্ষমতা তাদের রয়েছে।"