দুই উপদেষ্টার সহকারীর দুর্নীতির অভিযোগ দুদকের নজরে, গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু

দুই উপদেষ্টা সহকারীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নজরে এসেছে। এরই মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন।
রোববার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে দুদকের নিয়মিত ব্রিফিং শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'দুই জন উপদেষ্টার এপিএস, পিএস- যাদের কথা আপনারা বলছেন, সেই বিষয়ে দুদক আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী যে ধরণের কার্যক্রম গ্রহণ করতে হয়, সেটি আমরা করবো।'
সম্প্রতি দুর্নীতির অভিযোগে অব্যাহতি পাওয়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মো. মোয়াজ্জেম হোসেন এবং উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) ছাত্র প্রতিনিধি তুহিন ফারাবির বিরুদ্ধে এই দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
এর আগে সকালে, উপদেষ্টাদের এপিএস ও পিও-এর দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু করার দাবিতে দুদক কার্যালয়ে যায় যুব অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা। জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে তারা একটি মিছিল করে দুদকে আসে এবং পরে একটি প্রতিনিধি দল দুদকে স্মারকলিপি জমা দেয়।
এ বিষয়ে দুদক মহাপরিচালক বলেন, 'এটি (দুই উপদেষ্টার এপিএস ও পিও-এর দুর্নীতি) আমাদের নজরে এসেছে। আমরা এই বিষয়ে কাজ করছি। দুদক এ ধরনের যেকোনো অভিযোগের বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন। আমাদের গোয়েন্দা ইউনিট এই সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ বিষয়ে অগ্রগতি শীঘ্রই জানতে পারবেন।'
এর আগে গতকাল উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানান, সাবেক এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেনের বিষয়ে দুদককে অনুসন্ধান করার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, 'গুঞ্জন, গুজব নাকি সত্য তা দুদকের অনুসন্ধানেই বের হয়ে আসবে। ইতিমধ্যে অনেক তথ্য ভুলভাবে ছড়ানো হয়েছে। পদত্যাগকে অপসারণ হিসেবে প্রচার করা হয়েছে। অনুসন্ধানী তথ্য বা ব্যক্তিসাক্ষ্য ছাড়াই অনুমাননির্ভর মিডিয়া ট্রায়াল হয়েছে।'
তিনি আরও জানান, দুদকের অনুসন্ধানে সত্য প্রকাশ হোক, এটাই তার প্রত্যাশা।
দুই উপদেষ্টার সাবেক এপিএস-পিও'র দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদকে ৩ আইনজীবীর অভিযোগ
এদিকে মোয়াজ্জেম হোসেন, তুহিন ফারাবি ও আরেক ছাত্র প্রতিনিধি ডা. মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধে কয়েকশ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে অনুসন্ধান শুরুর দাবি জানিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) আবেদন করেছেন সুপ্রিম কোর্টের তিন আইনজীবী।
বিকেলে দুদকের সেগুনবাগিচা কার্যালয়ে তারা এই অভিযোগপত্র জমা দেন।
অভিযোগকারী আইনজীবীরা হলেন অ্যাডভোকেট নাদিম মাহমুদ, ইয়াছিন আলফাজ এবং অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সাবেক এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে তদবির বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। একই ধরনের অভিযোগ উঠেছে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সাবেক ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (ছাত্র প্রতিনিধি) তুহিন ফারাবি এবং ডা. মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধেও।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, অভিযুক্তরা চিকিৎসক, প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অর্থের বিনিময়ে পুনর্বাসনে সহায়তা করেছেন। পাশাপাশি স্থানীয় সরকার, স্বরাষ্ট্র, স্বাস্থ্য, পানিসম্পদ, গণপূর্ত, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে ঘুরে ঘুরে তদবির করতেন বলে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
তাদের মাধ্যমে পদে নিয়োগ বা পদায়নকৃতদের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ, ঘুষ প্রদান এবং এতে সহায়তার অভিযোগের সত্যতা দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর তফসিলভুক্ত অপরাধ হওয়ায় বিষয়টি দুদকের অনুসন্ধানের আওতাভুক্ত বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।
অভিযোগের বিষয়টি বিবেচনা করে আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে কার্যকর ও দৃশ্যমান অনুসন্ধান শুরুর আবেদন জানিয়েছেন আইনজীবীরা।