উপদেষ্টার পিএসের দুর্নীতির কথা শুনলে আনন্দে ডিগবাজি দেবেন হাসিনা: রিজভী

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দুই উপদেষ্টার পিএসের দুর্নীতির কথা শুনলে শেখ হাসিনা আনন্দে ডিগবাজি দেবেন।
আজ শনিবার (২৬ এপ্রিল) জাতীয় প্রেসক্লাবে 'ফ্যাসিবাদের মিথ্যা মামলায় ৬০ লাখ আসামি, মুক্তি কতদূর' শীর্ষক আলোচনা সভায় একথা বলেন তিনি।
মন্ত্রণালয়ে কেনে ছাত্রদের কমিটি থাকবে এমন প্রশ্ন তুলে রিজভী বলেন, ছাত্রদের কাজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, মন্ত্রণালয়ে নয়। তিনি বলেছেন, এখন দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ছাত্রসংগঠনের কমিটি দেওয়া হচ্ছে। এতে ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। সমাজের কিছু সুবিধাভোগী শ্রেণি ছাত্রদের বিপথে পরিচালিত করছে, প্রলোভনে ফেলছে।
তিনি আরও বলেন, আমি জানি বেশিরভাগ উপদেষ্টাই দুর্নীতিতে জড়িত নন। কিন্তু যাদের বিরুদ্ধে এর অভিযোগ উঠছে, সেখানে দুর্নীতির পরিমাণটা গুরুতর।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমরা শুনেছি প্রধান উপদেষ্টার সব মামলা প্রত্যাহার হয়ে গেছে। উনিও শেখ হাসিনার ঈর্ষা, বিদ্বেষ এবং আক্রোশের শিকার হয়েছেন। আমরাও আন্দোলন সংগ্রামে থেকেছি, নির্যাতন, নিপীড়নের শিকার হয়েছি। দুই-একজন উপদেষ্টাও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। তাদের মামলা যদি প্রত্যাহার হয়ে থাকে তাহলে এই লাখ লাখ মানুষেরগুলো কেন হচ্ছে না? অতি দ্রুত এই মামলাগুলো নিষ্পত্তির আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, পতিত ফ্যাসিবাদ সরকার বিতাড়িত হওয়ার পরও তার পাচার করা টাকার যে জোর, এই জোরের বলে যেমন হুমকি দিচ্ছে, তেমনি নানা ধরনের অপকর্ম করে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা বিএনপির নেতা-কর্মীদের নামে ৬০ লাখ মামলা দিয়েছে এই কারণে যে তিনি তাঁর লোক দিয়ে ব্যাংক দখল করবেন আর কেউ যাতে এর প্রতিবাদ না করতে পারেন। এর জন্য এই মিথ্যা মামলাগুলো দিয়েছে। শুধু তাই নয়, বিএনপির নেতা–কর্মীদের খুন করেছে, গুম করেছে। তাঁর ফ্যাসিবাদের লেলিহান শিখা জ্বালিয়ে রাখার জন্য এগুলো করেছে। জুলুমের এক বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আরও বলেন, শেখ হাসিনা মাদক সম্রাটদের এমপি বানাতেন, গডফাদার ও মাদককারবারিই ছিলেন হাসিনার কাছে বেশি সম্মানিত। আওয়ামী লীগের ব্যবসায়ী এস আলম, সালমান এফ রহমানসহ যারা শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ, তাদের টাকা পাচারের গল্প সিন্দাবাদের গল্পকে হার মানিয়ে নতুন রূপকথার গল্প বাংলাদেশের মানুষ শুনেছে। গল্পটি রূপকথার মতো হলেও এটি অত্যন্ত সত্য ও বাস্তব ঘটনা।
যেখানে আমেরিকানরা ফ্ল্যাট কিনতে সাহস পায় না, সেখানে শেখ হাসিনার এমপি-মন্ত্রীরা ফ্ল্যাট কিনেছেন জানিয়ে বিএনপির এ নেতা বলেন, 'শেখ পরিবারের টিউলিপ সিদ্দিকও এখান থেকে মুক্ত নন, তিনি আবার লন্ডনের এমপি ছিলেন। শেখ হাসিনা তো নিজেই গর্ব করে বলতেন, তার পিয়ন নাকি বাড়িতে হেলিকপ্টার ছাড়া যায় না, সে নাকি ৪০০ কোটি টাকার মালিক। তাঁর ঘনিষ্ঠ এস আলম তাঁর বাড়ির কাজের লোক দিয়ে একটি ব্যাংকের শাখা থেকে ২ হাজারের কোটির বেশি টাকা লোন তুলেছেন। শেখ হাসিনা দেশ থেকে জনগণের টাকা লুট করে পুঞ্জীভূত করে পাচার করেছেন। কিছু টাকা দেশে আছে, যেটি বিভিন্ন অপকর্ম করতে ব্যবহার হচ্ছে, আমরা দেখতে পাচ্ছি।'
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিন বলেন, 'পৃথিবীতে এমন অনেক দেশ আছে, যে দেশের জনসংখ্যা ৬০ লাখ নেই। অথচ বিএনপির ৬০ লাখ নেতা–কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে।'
মাহাদী আমিনের এ বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে রুহুর কবির রিজভী বলেন, 'একটি দেশের জনসখ্যার চেয়ে বাংলাদেশে আসামির সংখ্যা বেশি। ডেনমার্কে ৫০ লাখ লোক বসবাস করেন। অথচ আমাদের দেশে বিএনপির ৬০ লাখের বেশি নেতা–কর্মীকে আসামি করা হয়েছে।' আওয়ামী লীগের সময় হওয়া মুহাম্মদ ইউনূসের সব মামলা প্রত্যহার হলেও বিএনপি নেতা–কর্মীদের মামলাগুলো প্রত্যাহার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।