জুলাই অভ্যুত্থানে শহিদ ও আহতদের জন্য ৫৯৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দিচ্ছে সরকার

আগামী অর্থবছরের বাজেটে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহিদ পরিবার ও আহতদের মাসিক সম্মানী ভাতা ও এককালীন সহায়তা অনুদান বাবদ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় ৫৯৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দিচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এর মধ্যে শহিদ পরিবার ও আহতদের মাসিক সম্মানী ভাতা বাবদ ব্যয় হবে ২০৬.৬২ কোটি টাকা, বাকিটা শহিদ পরিবার ও আহতদের এককালীন অনুদান হিসেবে ব্যয় করা হবে।
শহীদ পরিবার ও গুরুতর আহতরা ('এ' ক্যাটাগরি) মাসে ২০ হাজার টাকা সম্মানী ভাতা পাবেন। 'বি' ক্যাটাগরির আহতরা মাসে ১৫ হাজার টাকা এবং 'সি' ক্যাটাগরির আহতরা মাসে ১০ হাজার টাকা করে পাবেন।
বর্তমানে জুলাই অভ্যুত্থানে শহিদ ও আহতরা কোনো মাসিক সম্মানী পান না। চলতি অর্থবছরে এ খাতে কোনো বরাদ্দও নেই। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় বীর মুক্তিযোদ্ধারা মাসে ২০ হাজার টাকা হারে সম্মানী পান।
জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের আগামী অর্থবছর থেকে মাসিক সম্মানী ভাতা দেওয়া হবে বলে ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসক সম্মেলনে ঘোষণা দিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম।
অভ্যুত্থানে শহিদদের পরিবারের জন্য এককালীন ৩০ লাখ টাকা করে মোট ২৪৭.৮০ কোটি টাকা এবং বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে আহতদের দেশে-বিদেশে পর্যাপ্ত চিকিৎসা অনুদান ও পুনবার্সনের জন্য মোট ৩৯০ কোটি টাকাসহ চলতি অর্থবছরের বাজেট থেকে মোট ৬৩৭.৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
ডিসেম্বরে চলতি অর্থবছরের বাজেট থেকে ২৩২.৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে বাকি অর্থ আগামী অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ দেওয়া হবে বলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। সেইসঙ্গে নির্দেশনা দেওয়া হয়, এই অর্থ শহিদ পরিবার ও আহতদের এককালীন অনুদান হিসেবে ব্যয় করতে হবে।
পরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় শহিদ ও আহতদের এককালীন অনুদানের পাশাপাশি নগদ সামাজিক সহায়তা সুবিধার আওতায় মাসিক সম্মানী দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
এই প্রেক্ষিতে গত ২৩ এপ্রিল ২০২৫-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মোট ৫৯৩.২১ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে একটি বাজেট প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও অর্থ সচিবের কাছে পাঠানো হয়েছে।
সুবিধাভোগী
কর্মকর্তারা জানান, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গেজেটভূক্ত শহিদ পরিবারের সংখ্যা ৮৩৪। চলতি অর্থবছর ৮২৬ পরিবারের জন্য ১০ লাখ টাকা করে মোট ৮২.৬০ কোটি টাকার সংস্থান রয়েছে। গেজেটভূক্ত বাকি আট শহিদ পরিবারের জন্য চলতি অর্থবছরেই অতিরিক্ত ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ প্রয়োজন।
এছাড়া গেজেটভূক্ত প্রত্যেক শহিদ পরিবারকে বাড়তি ২০ লাখ টাকা করে অনুদান দিতে আগামী বাজেটে ১৬৬.৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে।
গণঅভ্যুত্থানে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত আহতদের মধ্যে 'এ' ক্যাটাগরিতে রয়েছেন ৪৯৩ জন, 'বি' ক্যাটাগরিতে ৯০৮ জন ও 'সি' ক্যাটাগরিতে ১০ হাজার ৬৪২ জন। এছাড়া 'ডি' ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত ছাত্র-জনতার সংখ্যা ৭ হাজার জন। এর বাইরে ২ হাজার ৪১৬ জন আহত ছাত্র-জনতার ক্যাটাগরিভিত্তিক তালিকা পায়নি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
চলতি অর্থবছরে 'এ' ক্যাটাগরিভূক্তদের ২ লাখ টাকা, 'বি' ও 'সি' ক্যাটাগরিভূক্তদের ১ লাখ টাকা এবং 'ডি' ক্যাটাগরিভূক্তদের ৫০ হাজার টাকা হারে চিকিৎসা সহায়তা বাবদ বরাদ্দ রয়েছে ১২৫ কোটি টাকা। এছাড়া আহতদের দেশে-বিদেশে চিকিৎসা বাবদ চলতি অর্থবছর বরাদ্দ রয়েছে ২৫ কোটি টাকা।
২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাজেটে আহতদের অনুদান বাবদ ১৩৯.৩৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেবে অর্থ মন্ত্রণালয়। এখান থেকে 'এ' ক্যাটাগরিভূক্তরা জনপ্রতি ৩ লাখ টাকা, 'বি' ক্যাটাগরিভূক্তরা ২ লাখ টাকা এবং 'সি' ক্যাটাগরিভূক্তরা ১ লাখ টাকা অনুদান পাবেন।
আগামী অর্থবছরে শহিদ পরিবার ও এ ক্যাটাগরিভূক্ত আহতদের প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা হারে সম্মানী ভাতা বাবদ বরাদ্দ থাকছে ৩২ কোটি টাকা।
'বি' ক্যাটাগরিভূক্ত আহতদের সম্মানী ভাতা বাবদ ১৬.৩৪ কোটি টাকা এবং 'সি' ক্যাটাগরিভূক্তদের মাসিক সম্মানী বাবদ ১২৭.৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।
ক্যাটাগরিভিত্তিক তালিকার বাইরে থাকা ২ হাজার ৪১৬ জন আহত ছাত্র-জনতার মধ্য থেকে অর্ধেককে 'এ' ক্যাটাগরি হিসেবে ৩ লাখ টাকা হারে এবং বাকিদের 'বি' ক্যাটাগরি হিসেবে ২ লাখ হারে অনুদান বাবদ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ৬০.৪০ কোটি টাকা। এই এ ক্যাটাগরিভূক্তদের মাসিক সম্মানীতে ব্যয় হবে বাড়তি ৫০.৭৩ কোটি টাকা।