সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দর থেকে চালু হচ্ছে কার্গো ফ্লাইট, খুলছে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার

প্রথমবারের মতো সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কার্গো ফ্লাইট চালু হচ্ছে। আজ রোববার (২৭ এপ্রিল) স্পেনের উদ্দেশ্যে প্রথম চালান পাঠানোর মাধ্যমে এর আনুষ্ঠানিক সূচনা হবে। রপ্তানিকারকরা বলছেন, এর মাধ্যমে সিলেটে বাণিজ্যের নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলতে যাচ্ছে।
সিলেট থেকে ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে। তবে ওসমানী বিমানবন্দরে কার্গো টার্মিনাল না থাকায় এতদিন ঢাকা থেকে রপ্তানি করতে হতো। দীর্ঘদিনের দাবি ছিল সিলেট থেকেই সরাসরি পণ্য রপ্তানির ব্যবস্থা করা। ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ হওয়ার প্রেক্ষাপটে অবশেষে সেই দাবি পূরণ হতে চলেছে।
জালালাবাদ ভেজিটেবল অ্যান্ড ফিশ এক্সপোর্ট গ্রুপের সাবেক সভাপতি হিজকিল গুলজার বলেন, "ওসমানী থেকে কার্গো ফ্লাইট চালু হওয়া এ অঞ্চলের রপ্তানিকারকদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। এর ফলে সিলেটের পান, সাতকরা, লেবু, মাছসহ বিভিন্ন পণ্যের রপ্তানি বাড়বে। সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা গেলে ভারতের সেভেন সিস্টার্স অঞ্চল থেকেও ব্যবসায়ীরা এই সুবিধা নিতে পারবেন।"
ওসমানী বিমানবন্দরের পরিচালক হাফিজ আহমদ বলেন, "ঢাকার পর ওসমানীতে দ্বিতীয় কার্গো স্টেশন তৈরি হয়েছে। শুরুতে ইউরোপের কয়েকটি দেশে পণ্য সরবরাহ করা হবে।"
তবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ফ্লাইট চালু হলেও এখনই সরাসরি সিলেটে উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি সম্ভব হবে না, কারণ এখানে আধুনিক প্যাকিং হাউসের অভাব রয়েছে।
এ বিষয়ে হাফিজ আহমদ বলেন, "অবকাঠামো উন্নয়ন ও আধুনিক প্যাকিং হাউস স্থাপনের মাধ্যমে সিলেট থেকে দ্রুত পচনশীল পণ্য রপ্তানি সম্ভব হবে। তবে বর্তমানে তা সম্ভব নয়, কারণ শাকসবজি রপ্তানিতে বিশেষ আরএ-থ্রি প্রটোকল ও উন্নত প্যাকিং সুবিধা প্রয়োজন, যা এখানে তৈরি করতে হবে।"
উল্লেখ্য যে, এতদিন ভারতের পেট্রাপোল ও গেদে স্থলবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধার আওতায় বাংলাদেশ পণ্য রপ্তানি করত। কিন্তু গত ৮ এপ্রিল ভারত এই সুবিধা বাতিল করে। এরপর সড়কপথে দিল্লি হয়ে আকাশপথে কার্গো পরিবহনের বিকল্প হিসেবে ওসমানী বিমানবন্দর ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
সম্প্রতি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন জানিয়েছেন, ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি ব্যয় প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা বাড়তে পারে।
তিনি বলেন, এ পরিস্থিতিতে রপ্তানি কার্যক্রমে কোনো বিঘ্ন না ঘটাতে সরকার সরাসরি কার্গো ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট চালু করা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকেও শিগগিরই একই ধরনের কার্গো সেবা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।
নেওয়া হয়েছে সকল প্রস্তুতি
ওসমানী বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কার্গো ফ্লাইট পরিচালনার জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এক্সপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্সে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে এবং বসানো হয়েছে এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেমসহ (ইউডিএস) আধুনিক যন্ত্রপাতি।
১০০ টন ধারণক্ষমতার কার্গো টার্মিনাল ২০২২ সাল থেকেই প্রস্তুত ছিল, তবে নানা কারণে এতদিন চালু হয়নি। অবশেষে স্পেনের প্রতিষ্ঠান ইনডিটেক্সের পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে রোববার ওসমানী থেকে কার্গো ফ্লাইটের কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।
পণ্য রপ্তানির পুরো প্রক্রিয়া তত্ত্বাবধান করছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। কার্গো ফ্লাইটের নিরাপত্তার দায়িত্বেও থাকবে বেবিচক, আর গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব পালন করবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
জানা গেছে, আজ রোববার কার্গো ফ্লাইটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন বিষয়ক উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, সচিব নাসরীন জাহান, বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া এবং মেক্সিকোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী।