আগে স্থানীয় নির্বাচন দিয়ে সক্ষমতা যাচাই করুন: সরকারকে জামায়াত আমির

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, 'বর্তমান একটি নির্বাচন কমিশন হয়েছে। তারা বলেছে ইতিহাসের সবচেয়ে ভালো একটা নির্বাচন উপহার দেবে। আমরা তাদের একটি এসিড টেস্ট দেখতে চাই। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনটা দিন। আমরা দেখি, আপনাদের সদিচ্ছা ও সক্ষমতা কতটুকু।'
শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) সকালে নগরীর সার্কিট হাউজ মাঠে ময়মনসিংহ জেলা ও মহানগর জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, 'স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিনিধি না থাকার কারণে জনগণকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তাই স্থানীয় সরকার নির্বাচনটা দিন। আপনাদের সদিচ্ছা ও সক্ষমতার প্রমাণ আপনারা পেশ করুন। যদি এতে জনগণ সন্তুষ্ট হয়, তাহলে পরবর্তীতে জনগণ আপনাদের পূর্ণ সহযোগিতা দেবে। আর যদি এখানে কোনোকিছু ধরা পড়ে, তাহলে জনগণ আপনাদের লাল কার্ড দেখাবে।'
তিনি বলেন, 'কোনো বিশেষ দল বা গোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়ার কোনো ধরনের সুপারিশ আমরা মানব না। তবে জনগণকে সুবিধা দেওয়ার সব সুপারিশ মেনে নেব।'
জামায়াত আমির বলেন, 'অতীতে যা চলল এখনও যদি তা-ই চলে, তাহলে এত রক্ত কেন ঝরল? এত জীবন গেল কেন? এই জাতীর কাছে আমরা কীভাবে মুখ দেখাব? দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার জন্য প্রয়োজনে আমরা আরেকবার জীবন দিয়ে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত থাকব।'
অতীতের পঁচাগলা রাজনীতিতে নয় নতুন রাজনীতির উত্থানে তিনি তরুণদের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, 'তরুণদের ওপর ভর করে পরিবর্তন হয়েছে, জুলাই-আগস্ট বিপ্লবও হয়েছে তাদের ওপর ভর করে। তোমরা নিজেদের আশা-আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন গড়তে জীবন দেওয়ার জন্য রাস্তায় নেমে এসেছিলে। যতদিন পর্যন্ত তোমাদের ন্যায্য দাবি পূরণ না হবে, তোমরা এই লড়াই থেকে বিশ্রাম নিও না। তোমরা হবে আমাদের আগামীর নেতা, আমরা হব তোমাদের কর্মী। আমরা তোমাদের দেশ ও জাতির খেদমত করার সুযোগ করে দিতে চাই।'
তিনি বলেন, 'এই দেশ থেকে আটাশ লাখ কোটি টাকা আওয়ামী লীগ, তাদের দোসর ও প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা লুট করে নিয়ে গেছে। এই টাকা দেশের বাজেটের প্রায় ৪-৫ গুণ।'
এই টাকা জনগণের তহবিলে যোগ করার জন্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ বিদেশি প্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, 'আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই, যেখানে দল ও ধর্মের মধ্যে কোনো অধিকারের ব্যবধান থাকবে না। এই বাংলাদেশে সবার একই অধিকার ভোগ করার ন্যায্য অধিকার থাকবে।'
'আমরা একটি বৈষম্যমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত, দুঃশাসনমুক্ত মানবিক বাংলাদেশ চাই এবং সেই বাংলাদেশ অবশ্যই হতে হবে আল্লাহর বিধানের ভিত্তিতে, আল-কোরানের ভিত্তিতে। এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে যেখানে অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরা তাদের নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারবে। ইসলাম সব ধর্মের সম্মান বজায় রাখে। মানবিক বিধান কায়েমে আমরা এক, কোনো পার্থক্য নেই। ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা বাংলাদেশটাকে গড়ব।'
এই রাজনীতিক বলেন, 'নারী অধিকার সংস্কারের নামে সম্প্রতি একটি রিপোর্ট জমা হয়েছে। সে রিপোর্টের বেশ কিছু জায়গায় কোরান ও সুন্নাতের সম্পূর্ণ খেলাপি কিছু সুপারিশমালা পেশ করা হয়েছে। আমাদের প্রথম কথা হচ্ছে, যে কয়েকজন এই সুপারিশ পেশ করেছেন, তারা এদেশের সাড়ে নয় কোটি মায়ের প্রতিনিধিত্ব করেন না। তারা সমাজকে যে জায়গায় নিয়ে যেতে চান, আমরা সে জায়গায় তাদের নিতে দেব না ইনশাল্লাহ। এ দেশের মানুষের একটা সংস্কৃতি, একটা আদবকায়দা আছে। তাতে আঘাত করলে পুরো শৃঙ্খলা তছনছ হয়ে যাবে। এটা আমরা মানবো না। এটা আমরা মানতে পারি না।'
'আমরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে অনুরোধ করব, আপনি দেশে ফিরে এটা বাতিল করেন। আর যদি এরকম কোনো কমিশন করতে হয়, তাহলে সব শ্রেণি-পেশার দল ও আদর্শের মানুষকে নিয়ে করতে হবে।'
মহানগর জামায়াতের আমির কামরুল আহসান এমরুলের সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগীয় সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ড. ছামিউল হক ফারুকী, জেলা জামায়াতের আমীর আব্দুল করিমসহ কেন্দ্রীয়, মহানগর ও জেলা জামায়াতের নেতৃবৃন্দ।