সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর ভয়েস সংস্কার বাস্তবায়নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে পড়াদের ভয়েস বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ও শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
আজ বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) বিকেলে '৬ষ্ঠ বাংলাদেশ ইকোনমিকস সামিট, ২০২৫'-এর সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, 'আমরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গিয়েছি, তবে সব বৈষম্য নিয়ে আমরা কিন্তু কথা বলি না। আমাদের একটা জাতিসত্তার অন্বেষণের সময় যাচ্ছে, অথচ আমরা সব জাতিগোষ্ঠী বা নৃগোষ্ঠীর কথা বলি না। সব ধর্মের মধ্যে বৈষম্য লোপের কথা সেভাবে উঠে আসে না।'
তিনি বলেন, 'যারা সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে আছে, সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য তাদের ভয়েস বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাদেরকে নিজেদের ভয়েস নিয়ে দাঁড়াতে হবে। ওই মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানোটাই সবচেয়ে বড় সংস্কার।'
সিপিডির এই ফেলো বলেন, 'বাংলাদেশের রূপান্তরকে বুঝতে হবে, আমাদের আগে আগস্টের অভ্যুত্থান কেন হয়েছে তা বুঝতে হবে।'
তিনি বলেন, 'বেকারত্ব নিয়ে আইএলও ও বিবিএসের যে পরিসংখ্যান দেওয়া হয়, এই তথ্য নিয়ে আমাদের অনেকেরই দ্বিমত রয়েছে। ২০১৮ বা ২০২০ সাল পর্যন্ত যারা বেকার ছিলেন, তাদের অধিকাংশ ছিলেন ইন্টারমিডিয়েট পাশ। তবে বর্তমানে শিক্ষিত বেকার বেশি। আরও দেখা যাচ্ছে, বেকারদের দুই-তৃতীয়াংশ নারী। আগস্টের সরকার পরিবর্তনের কারণগুলো বুঝতে গেলে এগুলোও বুঝতে হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'গত দেড় দশকে বিনিয়োগ হয়েছে কম। বিশেষ করে প্রাইভেট ইনভেস্টমেন্ট অনেক কম। ফলে কর্মসংস্থান তৈরিও হচ্ছে কম। আবার গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষা না পেলে যেটুকু কর্মসংস্থান আছে, সেখানেও জায়গা হচ্ছে না তরুণদের। ফলে বিদেশিরা সেখানে চাকরি পাচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের জিজ্ঞেস করলে শোনা যায়, যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থী পাওয়া যায় না। তাই, একমাত্র সুযোগ থেকে যায় সরকারি চাকরি। সেখানেও চাকরি পেতে চেষ্টা-তদবির করতে হতো, এগুলোই আন্দোলনকে ট্রিগার করেছে।'
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, 'আমরা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে যেসব সংস্কারের কথা বলেছি, তার মধ্যে সবার আগে রেখেছি মানসম্মত শিক্ষার ব্যবস্থা করার বিষয়টি।'
তিনি বলেন, 'এই সরকার বাজেট নিয়ে যে কাজ করছে, সেটাতো আগের সরকারের বাজেট। এই সরকার আগের সরকারের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাকে বাতিল করে দিয়েছে, কিন্তু তারা কোনো মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনা করেনি। ফলে নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরা ভরসা পাচ্ছে না।'
সিপিডির এই ফেলো বলেন, 'ব্যবসায়ী, আমলাতন্ত্র ও রাজনীতিবিদরা মিলে একটা ক্লিপ্টোক্রেসির তৈরি হয়েছে। এগুলো সংস্কারের পথে যে বাধা তৈরি করছে। আমরা যে সংস্কারের কথা বলি, এই ক্লিপ্টোক্রেসি রেখে আমরা কীভাবে এসব সংস্কার করতে পারব! রিফর্ম এজেন্ডাকে সাস্টেনেবল করতে গেলে একটা কনস্টিটিউয়েন্ট লাগে যারা এটাকে কন্টিনিউ করবে।'
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অর্থনীতি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মাসুদা ইয়াসমীন এবং একই বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান।