৪৩তম বিসিএস: যে কারণে আটকে আছে বাদপড়াদের নিয়োগ

৪৩তম বিসিএসের চূড়ান্ত নিয়োগ থেকে বাদপড়া ২২৭ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৭১ জনকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তবে প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয় গত তিন মাসেও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেননি, ফলে বিষয়টি ঝুলে রয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে বাদপড়া প্রার্থীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করা হয়। বৈঠকে ১৭১ জন প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশ উঠে আসে। তবে ৫৬ জনের বিষয়ে গোয়েন্দাদের তথ্য অনুযায়ী তারা ছাত্রলীগ ও আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন)-এর সদস্য এবং ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, "ছাত্রলীগকে সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে, এবং নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্যদের নিয়োগের সুপারিশ করা যায় না। ইসকনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ রয়েছে, তাই এ ধরনের প্রার্থীদের বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করে সরকারকে অবহিত করা হয়েছে। সরকার যেটি সিদ্ধান্ত নেবে, সেটি বাস্তবায়ন করবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।"
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বারবার তাগাদা দেওয়া হলেও প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয় থেকে বাদপড়া প্রার্থীদের নিয়োগের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, সাবেক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম পদত্যাগের আগে বাদপড়া প্রার্থীদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। তবে ২৫ ফেব্রুয়ারি পদত্যাগের সময় তিনি কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। এরপর উপদেষ্টা মাহফুজ আলম দায়িত্ব নিলেও তিনিও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেননি।
গত ৮ জানুয়ারি জনপ্রশাসন বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়, যাতে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসকসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও বদলি সংক্রান্ত পরামর্শ দেওয়া হয়। সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম কমিটির সদস্যসচিব ছিলেন, এবং তার পদত্যাগের পর ২০ মার্চ মাহফুজ আলম এই দায়িত্ব পান।
সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, "কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে নাহিদ ইসলাম এবং পরে মাহফুজ আলম বাদপড়াদের ফাইল পর্যালোচনার দায়িত্বে ছিলেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বিষয়গুলো কমিটির অনুমোদনের পর চূড়ান্ত করেছে।"
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, "বাদপড়াদের মধ্য থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যাদের নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশ করেছিল, তাদের বাইরেও বেশ কয়েকজনকে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলেছিলেন উপদেষ্টা নাহিদ। কিন্তু দায়িত্বে থাকার সময় তিনি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেননি। পরে উপদেষ্টা মাহফুজ সেই দায়িত্ব পেলেও তিনিও এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাননি।"
প্রজ্ঞাপন ও সংশোধিত প্রজ্ঞাপন
৪৩তম বিসিএসের নিয়োগের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ১৫ অক্টোবর একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। পরে ৩০ ডিসেম্বর ওই প্রজ্ঞাপন বাতিল করে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে বিভিন্ন ক্যাডারে ১৬৮ জন প্রার্থী বাদ পড়েন।
১৫ অক্টোবরের প্রজ্ঞাপনে ৯৯ জন প্রার্থী বাদ পড়েছিলেন। সব মিলিয়ে ৪৩তম বিসিএস থেকে বাদ পড়েন ২৬৭ জন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেসুর রহমান ১০ জানুয়ারি বলেছিলেন, "৪৩তম বিসিএস থেকে বাদ পড়া ২২৭ জনের আবার তদন্ত হয়েছে। ফৌজদারি অপরাধে জড়িত না হলে বাকিরা সবাই নিয়োগ পাবেন।"
এরপর গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে বাদপড়াদের নিয়োগের সুপারিশ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর আগে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদপ্তর (এনএসআই) এবং প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই) থেকে প্রার্থীদের প্রাক্-চরিত্র যাচাই করা হয়।
প্রার্থীদের ক্ষোভ
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সুপারিশ করার তিন মাস পরেও নিয়োগ না হওয়ায় কয়েকজন প্রার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
একজন প্রার্থী বলেন, "আমরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও উপদেষ্টা দপ্তরে যোগাযোগ করে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। অনেকের পরিবারও ভেঙে পড়েছে। ঈদের আগে বাদপড়া একজন প্রার্থী আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। আমরা চাই সরকার দ্রুত গেজেট প্রকাশ করুক।"
তিনি আরও জানান, "তথ্য উপদেষ্টা দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, তিনি দেশে ফিরলেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন।"