শেষ শুল্ক-কর অব্যাহতির মেয়াদ: ব্যবসায়ীদের চাপের মধ্যে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ল লিটারে ১৪ টাকা

বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ১৪ টাকা বাড়িয়ে খুচরা মূল্য ১৭৫ টাকা থেকে বেড়ে ১৮৯ টাকা করা হয়েছে। নতুন এই দাম তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে।
ভোজ্যতেল মিল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে এই ঘোষণা দেয়।
নতুন ঘোষণা অনুসারে, পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের বোতলের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৯২২ টাকা, যা ছিল ৮৫২ টাকা। বোতলজাত তেলের পাশাপাশি খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি লিটার ১৬৯ টাকা, যা ছিল ১৫৭ টাকা।
মার্চের শেষে ভোজ্য তেলের ওপর আরোপিত সব ধরনের শুল্ক, কর ও ভ্যাট প্রত্যাহারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ব্যয় বৃদ্ধির কথা বলে তেলের দাম বাড়াতে চাপ দিচ্ছিলেন আমদানিকারক ও মিল মালিকরা।
ঈদের পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) মধ্যে তবে কয়েক দফা বৈঠকেও সিদ্ধান্ত হয়নি।
বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে গত ২৭ মার্চ বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনকে (বিটিটিসি) চিঠিতে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৮ টাকা এবং খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দাম ১৩ টাকা করে বাড়ানো প্রস্তাব করা হয়।
রমজানে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে গত বছরের ডিসেম্বরে ভোজ্য তেলের ওপর আরোপিত সব ধরনের শুল্ক, কর ও ভ্যাট প্রত্যাহার করেছিল সরকার। একইসঙ্গে বিক্রয় পর্যায়ে ভ্যাট নামিয়ে আনা হয় ৫ শতাংশে।
এর ফলে প্রতি কেজি অপরিশোধিত সয়াবিনে শুল্ক-কর ১৭-১৮ টাকা থেকে কমে ৭ টাকায় নেমে আসে। মার্চে কাস্টমসের মাধ্যমে খালাস হওয়া সয়াবিন তেলে শুল্ক-কর ছিল কেজিপ্রতি ৬ থেকে ৭ টাকা। এই ছাড় কার্যকর ছিল ৩১ মার্চ পর্যন্ত।
রমজানের মাঝামাঝিতে ট্যারিফ কমিশন ভোজ্য তেলে আমদানি পর্যায়ের শুল্ক-কর রেয়াতের মেয়াদ ৩০ জুন পর্যন্ত বৃদ্ধির সুপারিশ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দিলেও সিদ্ধান্ত দেয়নি সংস্থাটি।
এদিকে বিশ্বব্যাংকের পণ্যমূল্যের তথ্যমতে, গত কয়েক মাসে বিশ্ববাজারে ভোজ্য তেলের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তেলের দাম কমেছেও।
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের দাম ছিল টনপ্রতি ১ হাজার ৪৮ ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ১ হাজার ৬৯ ডলার ও মার্চে কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫ ডলারে। বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত পাম তেলের টনপ্রতি দাম জানুয়ারিতে ছিল ১ হাজার ৭০ ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ১ হাজার ৬৭ ডলার ও মার্চে ১ হাজার ৬৯ ডলার। অর্থাৎ পাম তেলের বাজারও স্থিতিশীল।
স্থানীয়ভাবে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরকার-নির্ধারিত মূল্য প্রতি লিটার ১৭৫ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেল ও পামওয়েল প্রতি লিটারের দাম ১৫৭ টাকা।
তবে চট্টগ্রামে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল পাইকারিতে ১৭৩ টাকা ও খুচরায় ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি লিটার পাম তেলের দাম পাইকারিতে ১৫৮ টাকা ও খুচরায় ১৬৮ টাকা।
ঈদের পর এখনও বাজারে বোতলজাত তেলের সংকট আছে। যদিও ভোজ্য তেলের পর্যাপ্ত মজুত আছে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ২০২৪ সালে ক্রুড পাম তেল ও ক্রুড় সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে ৫ লাখ ৬০ হাজার ১৭৬ টন। ২০২৩ সালে এই আমদানির পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৭৮ হাজার ৬৭৩ টন। অর্থাৎ ২০২৪ সালে ২০২৩ সালের তুলনায় ৮১ হাজার ৫০৩ টন ভোজ্য তেল বেশি আমদানি হয়েছে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে সাড়ে ৩ লাখ টনেরও বেশি সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে। প্রতি মাসে সয়াবিন টলের চাহিদা ৮৭ হাজার টন।
চট্টগ্রাম নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজারের ফারুক অ্যান্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী সৈয়দ হক গতকাল রাতে টিবিএসকে বলেন, 'ঈদের পর বাজার সরগরম হয়নি; এজন্য সরবরাহও কম। তেলের দাম বাড়তে পারে শুনেছি। এজন্যই সরবরাহ কিছুটা কম।'
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের একজন পাইকারি ব্যবসায়ী বলেন, দাম বাড়ানোর জন্য ভোজ্য তেলের সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। পাইকাররা বেশি মুনাফার আশায় তেল মজুত করে রেখেছেন।
সয়াবিন তেলের শীর্ষস্থানীয় আমদানিকারক সিটি গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) বিশ্বজিৎ সাহা টিবিএসকে বলেন, '১ এপ্রিল আমাদের মজুত কত আছে, এ তথ্য নিয়ে গেছে ট্যারিফ কমিশন। এর ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট দেওয়া হচ্ছে। যেহেতু শুল্ক-কর ছাড়ের সুবিধা প্রত্যাহার করা হয়েছে, তাই দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।'
সয়াবিন তেলের আরেক শীর্ষস্থানীয় আমদানিকারক টি কে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতহার বলেন, 'চলতি মাসের শুরু থেকে প্রতি লিটারে তেলের ওপর ২০-২১ টাকা করে ভ্যাট দিয়ে পণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। ঈদের পর এখন ওইভাবে চাহিদা তৈরি হয়নি। পণ্য সরবরাহ ঠিক আছে।'