দাম কমাতে তুরস্ক ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে কয়েক মিলিয়ন ডিম আমদানি করবে যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের জন্য ডিমের রেকর্ড পরিমাণ দামের লাগাম টানতে ট্রাম্প প্রশাসন তুরস্ক ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ডিম আমদানির পরিকল্পনা করছে। খবর বিবিসির। এ দুই দেশ ছাড়াও অন্যান্য দেশ থেকে ডিম আমদানির জন্যও যোগাযোগ করছে যুক্তরাষ্ট্র।
হোয়াইট হাউসের কৃষি বিষয়ক সচিব ব্রুক রলিন্স সাংবাদিকদের বলেন, "আমরা স্বল্পমেয়াদে কয়েক মিলিয়ন ডিম আমদানির বিষয়ে আলোচনা করছি।"
প্রশাসনের এক বিলিয়ন ডলারের পরিকল্পনার ঘোষণার পর এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়া বার্ড ফ্লু মহামারি মোকাবিলায় এ পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।
ট্রাম্পের দাম কমানোর প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও, গত বছরে ডিমের মূল্য ৬৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে এবং ২০২৫ সালে এটি আরও ৪১ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
এএফপি জানায়, পোলিশ এবং লিথুয়ানিয়ান পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন শুক্রবার জানিয়েছে যে তারা সম্ভাব্য ডিম রপ্তানির বিষয়ে মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছে।
ন্যাশনাল চেম্বার অফ পোল্ট্রি অ্যান্ড ফিড প্রডিউসারের পরিচালক কাতারজিনা গাওরনস্কা এএফপিকে বলেন, "ফেব্রুয়ারিতে ওয়ারশতে আমেরিকান দূতাবাস আমাদের সংস্থার কাছে জানতে চেয়েছিল পোল্যান্ড মার্কিন বাজারে ডিম রপ্তানিতে আগ্রহী কিনা।"
ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ) ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ১ বিলিয়ন ডলারের একটি পাঁচ-দফা পরিকল্পনা উন্মোচন করে। এর মধ্যে জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার, ভ্যাকসিন গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার এবং কৃষকদের জন্য আর্থিক ত্রাণ কর্মসূচির জন্য ৪০০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রাখা হয়।
ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে, বাণিজ্যিক ডিম খামারগুলোর জন্য বিনামূল্যে পরামর্শ সেবা ও সর্বোত্তম চর্চা সংক্রান্ত নির্দেশিকা প্রদান করা হবে। পাশাপাশি, বার্ড ফ্লুর বিস্তার রোধে সহায়তা করতে ঝুঁকিপূর্ণ খামারগুলোর জন্য ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত খরচ বহন করা হবে।
কৃষি বিষয়ক সচিব ব্রুক রলিন্স বলেন, "আমাদের পরিকল্পনা ছিল সারা দেশে অডিটের জন্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা। বিশেষ করে যাতে ইউএসডিএ ডিম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের খামার সুরক্ষিত করতে সহায়তা করা যায়। এছাড়া আমরা যেহেতু সম্প্রতি এই উদ্যোগ নিয়েছি তাইবার্ড ফ্লুর সংক্রমণেও উল্লেখযোগ্য হ্রাস লক্ষ্য করা গেছে।"
যদিও এভিয়ান ফ্লু (এইচ৫এন১) দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন হাঁস-মুরগির খামারগুলোর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। ২০২২ সালে এ মহামারি প্রকট আকার ধারণ করে। সেসময় ১৫৬ মিলিয়নের বেশি পাখি মারা গেছে এবং ডিমের দাম আকাশচুম্বী হয়েছে।
গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডিমের দাম ট্রাম্পের জন্য একটি প্রধান রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে ওঠে। কারণ তিনি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে ভোটারদের হতাশা কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন।
এই মাসের শুরুতে মার্কিন কংগ্রেসে ভাষণ দেওয়ার সময়, তিনি ডিমের মূল্যবৃদ্ধির জন্য তার পূর্বসূরি জো বাইডেনকে দায়ী করেন।
ট্রাম্প বলেন, "জো বাইডেন বিশেষ করে ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে দিয়েছেন এবং আমরা এটিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরানোর জন্য কঠোর পরিশ্রম করছি।"
বার্ড ফ্লু প্রাদুর্ভাবের কারণে গত বছর বাইডেন প্রশাসন লক্ষ লক্ষ ডিম পাড়ার মুরগি হত্যার নির্দেশ দেয়। যার ফলে ডিমের দাম আরও বেড়ে যায়। তবে, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুর দিকেও ডিমের দাম ঊর্ধ্বমুখী ছিল।