চলন্ত বাসে ছিনতাই-ডাকাতি: ‘বেকারত্ব’কে দায়ী করছে হাইওয়ে পুলিশ, জেলা পুলিশ বলছে ‘পরিকল্পিত’

সাভারের মহাসড়কে চলন্ত বাসে একের পর এক ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনার জন্য ফুটপাত ও বাজার কেন্দ্রিক চাঁদাবাজদের 'বেকার' হয়ে পড়াকে বড় কারণ হিসেবে দেখছে হাইওয়ে পুলিশ। তাদের দাবি, ৫ আগস্টের পর এসব চাঁদাবাজদের অবৈধ আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা ছিনতাই-ডাকাতির মতো অপরাধে জড়াচ্ছে।
গাজীপুর হাইওয়ে পুলিশের পুলিশ সুপার (এসপি) ড. একেএম আক্তারুজ্জামান বসুনিয়া দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আগে যারা ফুটপাত, স্ট্যান্ড, মোড় থেকে চাঁদা তুলত, তাদের একটি বড় গ্রুপ ৫ আগস্টের পর একেবারে বেকার হয়ে গেছে। যদিও তাদের কাজটা কোনো চাকরি ছিল না, তারা অনৈতিকভাবে আয়ের ব্যবস্থা করত। এখন সেই উৎস নেই, তাই দিনের ইনকামের জন্য তারা চলন্ত বাসে উঠে ১–২টি মোবাইল ফোন বা কিছু টাকা নিয়ে নেমে যাচ্ছে।'
তিনি আরও বলেন, 'এরা কেউ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়, ফুটপাতেই বড় হয়েছে। বিভিন্ন ছোট ছোট কমিটিতে ছিল, নানা পেশার মানুষ। এতদিন অবৈধ আয়ের পেছনে সময় দিয়েছে, এখন সেই পথ বন্ধ হওয়ায় সহজ উপায় হিসেবে ছিনতাই-ডাকাতির পথ বেছে নিচ্ছে।'
তিনি জানান, এসব অপরাধ দমনে হাইওয়ে পুলিশে ৭০০ সদস্য নিয়োগ দিয়েছেন আইজিপি। গাজীপুর রিজিয়নের ছয়টি মহাসড়কে ৫১টি পেট্রোল টিম কাজ করছে। স্থানীয় বাসগুলোতে যাত্রীবেশে পুলিশের সদস্য বসানো হচ্ছে এবং ভিডিও ধারণ করা হচ্ছে যাতে অপরাধীদের শনাক্ত করা যায়।
তবে তিনি এসব ঘটনা স্বীকার করে বলেন, 'সব জায়গা কাভার করা যায় না। ছিনতাইকারীরা ব্রিজের ওপরে উঠে ১০০–২০০ মিটার যেতেই নেমে যায়। এছাড়া চালক ও হেলপারদেরও কেউ কেউ জড়িত হতে পারে—যেখানে বাস থামানোর কথা না, সেখানে থামিয়ে অপরাধীদের তোলে।'
অন্যদিকে ঢাকা জেলা পুলিশের মতে, চলন্ত বাসে এসব ঘটনা পরিকল্পিতভাবে সংঘটিত হচ্ছে।
ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিনুর কবীর দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'এটা পুলিশের ব্যর্থতা নয়, বরং অস্থিরতা তৈরির জন্য পরিকল্পিতভাবে এসব করা হচ্ছে।'
কে বা কারা এসব পরিকল্পনা করছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের যারা এখন ভারতে পালিয়ে আছে, তারা সেখান থেকে প্রচুর টাকা খরচ করে এসব করাচ্ছে—এমন তথ্য আমাদের কাছে আছে।'
এসপি শাহিনুর জানান, বাসগুলো চেক করতে পুলিশ লাইনের ১০ জন সদস্য ও থানার একটি টিম কাজ করছে। কেউ দায়িত্বে অবহেলা করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, 'গত দুই মাসে থানা এলাকায় তিনটি ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে দুটি আমরা ডিটেক্ট করেছি। পাঁচজনকে গ্রেপ্তার ও টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। আজকের ঘটনার অথেনটিসিটি আমরা এখনো পাইনি, কেউ কিছু জানায়নি, কোনো ভুক্তভোগীকেও পাইনি। তবে প্রমাণ পেলে দায়িত্বরতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
তবে পুলিশের এসব দাবি মানতে নারাজ পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। তারা এসব ঘটনার জন্য সরাসরি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা ও অবহেলাকে দায়ী করছেন।
সাভার পরিবহনের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন বলেন, 'আমি বারবার বলছি, একটা চক্র এসব করছে, ব্যবস্থা নিন—থেমে যাবে। সেনাবাহিনীকেও জানিয়েছি। কিন্তু পুলিশ ব্যবস্থা নেয় না। থানায় জিডি করেও গুরুত্ব পেলাম না, শুধু বলল—জিডি করে যান।'
তিনি জানান, 'গত ছয় মাসে অন্তত ৪–৫টি বাসে ছিনতাই-ডাকাতি হয়েছে। এর জন্য আমরা ভুগছি—বাস ভাঙচুর, চালক-হেলপারকে দোষারোপ করা হচ্ছে। অথচ একই জায়গায় বারবার হচ্ছে, পুলিশ থাকলেও ঘটনা ঠেকাতে পারছে না।'
উল্লেখ্য, গত বছরের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে বিভিন্ন পরিবহনের চলন্ত বাসে অন্তত ছয়টি ছিনতাই-ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে অন্তত দুটি ঘটনায় যাত্রীদের ছুরিকাঘাত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।