পূর্বাচল প্লট দুর্নীতি মামলায় হাসিনা, পুতুলসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের করা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব দুদকের দায়ের করা চার্জশিট গ্রহণ করে আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদকের প্রসিকিউশন বিভাগের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, আদালত ১৮ আসামির বিরুদ্ধেই চার্জশিট গ্রহণ করেছেন এবং তারা পলাতক থাকায় তাদের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। একইসঙ্গে আগামী ৪ মে গ্রেপ্তার সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য করা হয়েছে।
আসামিদের মধ্যে রয়েছেন—গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব পুরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, সচিব মো. শহীদ উল্লাহ খন্দকার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানের পিএ মো. আনিছুর রহমান মিঞা, রাজউকের সাবেক সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, কবির আল আসাদ, তন্ময় দাস, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, মেজর (অব.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, মো. নুরুল ইসলাম, পরিচালক শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান, হাবিবুর রহমান, মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন ও শরীফ আহমেদ। শেষের দুইজন তদন্তে প্রাপ্ত নতুন আসামি।
ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে শেখ হাসিনা পরিবারের জন্য ৬০ কাঠা জমির প্লট বরাদ্দে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ মেলায় মামলাটি দায়ের করা হয়। এটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় গঠিত কমিশনের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দায়ের করা প্রথম মামলা।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ১০ কাঠার ছয়টি প্লট বরাদ্দ প্রদান ও গ্রহণ করেন, যা দুর্নীতি হিসেবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ প্লট বরাদ্দ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত অন্যদের বিরুদ্ধেও পর্যায়ক্রমে মামলা করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
গত ১২ জানুয়ারি দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ধানমন্ডি আবাসিক এলাকায় নিজের ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নামে রাজউকের এখতিয়ারাধীন এলাকায় বাড়ি বা ফ্ল্যাট থাকার পরও তা গোপন করে, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে আইন, বিধি ও নীতিমালা লঙ্ঘন করেছেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।
এজাহারে আরও বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার ওপর অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ করেন এবং বরাদ্দ-সংক্রান্ত দায়িত্বে থাকা সরকারি কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করেন। প্লট বরাদ্দে আইনানুগ পারিশ্রমিক পরিশোধ না করে, বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও, পরস্পর যোগসাজশে নিজেদের লাভবান ও অন্যকে লাভবান করার উদ্দেশ্যে পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নম্বর রোডের ১৭ নম্বর প্লটটি সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরে তিনি বাস্তব দখলসহ রেজিস্ট্রি মূলে ওই প্লট গ্রহণ করেন।
প্রতারণামূলকভাবে অবৈধ পারিতোষিক দেওয়া-নেওয়া, অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ এবং বেআইনি সুবিধা প্রদর্শনের মাধ্যমে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে দণ্ডবিধি ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ করেছেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।
তদন্ত শেষে গত ১০ মার্চ শেখ হাসিনা, সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আফনান জান্নাত কেয়া।