শেখ হাসিনা পালানোর পর হৃদয়কে হত্যা করে লাশ গুম করে পুলিশ, ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী

গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পরও গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকায় ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালায় পুলিশ। কোনাবাড়ীতে আনন্দ মিছিলে অংশ নেওয়া হৃদয়কে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। পরদিন সেই লাশ পুলিশই গুম করে ফেলে বলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষীর জবানবন্দিতে তুলে ধরেন প্রত্যক্ষদর্শী সোহেল মাহমুদ।
সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
জুলাই-আগস্টে হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ৩৮তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন কোনাবাড়ী এলাকার সোহেল মাহমুদ।
তিনি বলেন, '২০২৪ সালের ৫ আগস্ট একদিকে কারফিউ, অন্যদিকে মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি। ছাত্র-জনতার এ আন্দোলনে গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে অংশ নেন হৃদয়। তবে তার আর ঘরে ফেরা হয়নি। পুলিশের গুলিতে নিভে যায় হৃদয়ের প্রাণ। এমনকি লাশটিও গুম করে ফেলা হয়।'
জবানবন্দিতে সোহেল মাহমুদ বলেন, '২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সকালে আমার বাড়ির পাশে শরীফ মেডিকেলের সামনে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যাই। ওইদিন কারফিউ ছিল। ছাত্রদের মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচিও ছিল। দুপুর ১২টায় আমি বাড়ি চলে আসি। বাড়িতে থাকতেই শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন বলে জানতে পারি। এরপর আবারও শরীফ মেডিকেলের সামনে যাই। সেখানে গিয়ে হাজারও লোককে বিজয় মিছিল নিয়ে এদিকে আসতে দেখি। আর উল্টো দিক থেকে মিছিলকে লক্ষ্য করে টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও গুলি করতে থাকে পুলিশ। এতে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় মিছিলটি।'
তিনি বলেন, 'ওই সময় আমিসহ কিছু লোক আমার বাড়িতে আশ্রয় নেন। আমার বোনজামাই হাফিজুর রহমান তপনের রিকশা গ্যারেজে আশ্রয় নেন কিছু লোক। ছাদ থেকে তাদের দেখতে পাই। কারণ গ্যারেজটি আমার বাড়ির পাশেই। ওই সময় গ্যারেজ থেকে একজনকে তুলে নিয়ে যান কয়েকজন পুলিশ সদস্য। এরপর আমার বাড়ির পাশের কবরস্থানের কাছে নিয়ে তাকে গুলি করেন তারা। এতে ঘটনাস্থলে ওই লোক মারা যান। সঙ্গে-সঙ্গেই লাশটি থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। গুলি করার সময় ওসি আশরাফ ও ডিবির একজন কর্মকর্তা ছিলেন। পরে গুলিবর্ষণকারীর নাম জানতে পারি। তিনি হলেন কনস্টেবল আকরাম। আর নিহতের নাম হৃদয়।'
পরদিন ৬ আগস্ট হৃদয়ের লাশটি পুলিশ গুম করে ফেলেন বলেও জানতে পারেন এই প্রত্যক্ষদর্শী।
তিনি বলেন, 'থানা থেকে হৃদয়ের লাশ নিয়ে পালিয়ে যান পুলিশ সদস্যরা। আমি এ হত্যাকাণ্ডের জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, অন্যান্য মন্ত্রী, স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তাসহ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দায়ী করছি। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।'
সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে তাকে জেরা করেন শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন।
এদিন বেলা সাড়ে ১১টার পর থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। একই মামলায় ৩৭তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন চট্টগ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ হাসান।
শেখ হাসিনার এ মামলায় আসামি থেকে রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে আজও ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।