পিরোজপুরে ডায়রিয়ার প্রকোপ, সরকারি হাসপাতালের সেবা নিয়ে অসন্তুষ্টি রোগীদের

গ্রীষ্মের তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডায়রিয়ার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে পিরোজপুরে। জেলা সদর হাসপাতালে ধারণক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ রোগী ভর্তি রয়েছে। প্রতিদিন নতুন রোগী আসায় হাসপাতাল চাপে হিমশিম খাচ্ছে।
এরমধ্যে অধিকাংশ রোগীই শিশু। বেডের সংকটে অনেককে মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। হাসপাতালের সেবার মান নিয়ে অভিযোগ ও অসন্তোষ রয়েছে রোগীদের মাঝে।
সদর হাসপাতালের প্রশাসনিক শাখা সূত্রে জানা গেছে, ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ২৬টি বেডের বিপরীতে মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) ভর্তি ছিলেন ৫২ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ভর্তি ২৯ জন। এক সপ্তাহে চিকিৎসা নিয়েছেন ২১৮ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ওয়ার্ডে গাদাগাদি করে বসে ও শুয়ে আছেন রোগী ও স্বজনেরা। কয়েকজন রোগী টয়লেটের সামনেও বেড পেতে শুয়ে আছেন। টয়লেট অপরিচ্ছন্ন, মেঝেও নোংরা।

সদর উপজেলার হুলারহাট গ্রামের মাকসুদা বেগম বলেন, 'এক সপ্তাহ ধরে আমার মেয়ে অসুস্থ। তিনদিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি আছি। প্রথমে এসে বেড পাইনি, ফ্লোরে ছিলাম। একদিন পরে বেড পেয়েছি। ডায়রিয়ার ছোট ওয়ার্ড, রোগীতে ঠাসা।'
কাউখালি উপজেলার শিয়ালকাঠি এলাকা থেকে আসা ১ বছর তিন মাস বয়সি মুনতাহার মা রহিমা বেগম বলেন, 'চারদিন ধরে মেয়ে অসুস্থ। আজকে হাসপাতালে এসে বেড পাচ্ছি না।'
পার্শ্ববর্তী বাগেরহাট জেলার মোড়েলগঞ্জ থেকে আসা ৬ মাস বয়সী তানজিলার মা নাদিরা আক্তার বলেন, 'এখানে দুইদিন ধরে ভর্তি। সব ওষুধ হাসপাতাল থেকে পাচ্ছি না, বাইরে থেকেও কিনতে হচ্ছে। অনেক অব্যবস্থাপনা আছে। সব বললে চিকিৎসা বন্ধ করে দিতে পারে।'

দাউদপুরের রুবেল মোল্লা বলেন, 'হাসপাতালে খাবার পানির মারাত্মক সংকট। বাইরে থেকে কিনে খেতে হচ্ছে। মেঝে পরিষ্কার করা হয় না, দিনে একবারও ঝাড়ু দেয় না। রোগীদের সঙ্গে খুবই অবহেলা করা হচ্ছে।'
জেলা হাসপাতালের সেবিকা অঞ্জলি রায় বলেন, 'ঈদের পর থেকেই রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। আমরা সাধ্যমতো সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। পরিচ্ছন্নতা কর্মী একজন, সেবিকাও কম। লোকবলের তুলনায় রোগীর চাপ বেশি, এতে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।'
হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক সুরঞ্জিত সাহা বলেন, 'ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। শিশু রোগীর সংখ্যাই বেশি, যা আমাদের ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি।'
আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. নিজাম উদ্দীন বলেন, 'পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। চিকিৎসায় পর্যাপ্ত ওষুধ আছে। হঠাৎ রোগী বেড়ে যাওয়ায় কিছু সমন্বয়হীনতা হতে পারে, তবে চিকিৎসায় আন্তরিকতার ঘাটতি নেই।'