সাভারে বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে শ্রমিক বিক্ষোভ

ঢাকার সাভারে আংশিক লে-অফ ঘোষণা করা পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠান প্রাইড গ্রুপের দুটি কারখানা অনতিবিলম্বে খুলে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন কারখানা দুটির শ্রমিকরা।
সোমবার (৭ এপ্রিল) সকালে প্রাইড গ্রুপের কারখানা এইচ.আর টেক্সটাইল মিলস এবং ফ্যাশন নীট গার্মেন্টস লিমিটেড-এর শ্রমিকরা কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে এই অবস্থান এবং বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ঘটনাস্থলে শিল্প পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত রয়েছেন।
এর আগে গত শনিবার (৫ এপ্রিল) কারখানা দুটির মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও কমপ্লায়েন্স) মনিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত পৃথক দুটি নোটিশে কারখানা দুটিতে আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত লে-অফ ঘোষণা করা হয়। নোটিশে জানানো হয়, এর মধ্যে এইচ.আর টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড-এর টেক্সটাইল বিভাগ, প্রশাসন (আংশিক) এবং নিরাপত্তা বিভাগ এবং ফ্যাশন নীট গার্মেন্টস লিমিটেড-এর প্রশাসন (আংশিক) এবং নিরাপত্তা বিভাগ এই লে-অফের আওতামুক্ত থাকবে।
লে-অফের বিষয়টি নিশ্চিত করে গতকাল রবিবার প্রতিষ্ঠান দুটির মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও কমপ্লায়েন্স) মনিরুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-কে বলেন, মূলত জ্বালানি সংকট, কিছু আর্থিক জটিলতা এবং কার্যাদেশ সংকটের কারণে কর্তৃপক্ষ কারখানা দুটিতে আংশিক এই লে-অফ ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এছাড়াও সমস্যাগুলো সমাধানে কর্তৃপক্ষ কাজ করছে এবং খুব শীঘ্রই সংকট কাটিয়ে প্রতিষ্ঠান দুটি পুরোদমে আবারও অপারেশনে ফিরবে বলেও এসময় আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এইচ.আর টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড-এর একজন শ্রমিক বলেন, "দীর্ঘদিন যাবত কারখানায় কাজ নেই, প্রায়শই সমস্যা হচ্ছে। মালিকপক্ষ চালাতে ব্যর্থ হলে আমাদের যাবতীয় পাওনা, সার্ভিস বেনিফিট দিয়ে আমাদের বিদায় করে দিন, অথবা কারখানা খুলে দিন। মূল মজুরির ৫০ শতাংশ টাকা দিয়ে আমরা কীভাবে চলবো?"
কারখানা সূত্র জানায়, মূলত কোভিড এবং পরবর্তীতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কারখানাটি কার্যাদেশ সংকটসহ আর্থিক চাপের মুখে পড়ে। পরবর্তীতে সমস্যাগুলো কিছুটা কাটিয়ে উঠতে পারলেও আর্থিক কিছু জটিলতা এবং বিশেষ করে সময়মতো এলএনজি (গ্যাস) না পাওয়ার কারণে কার্যাদেশ সংকটের কারণে বর্তমানে কিছুটা কঠিন সময় পার করছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়াও জ্বালানি সংকট, বিশেষ করে গ্যাস সংকট প্রতিষ্ঠানটির এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
শ্রমিক অসন্তোষের বিষয়ে জানতে চাইলে আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে কারখানা দুটির মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও কমপ্লায়েন্স) মনিরুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-কে বলেন, "ইতোমধ্যে সব পক্ষের প্রতিনিধি—মালিক প্রতিনিধি, শ্রমিক প্রতিনিধি, শিল্প পুলিশ, সেনাবাহিনী, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে আমরা একটি সমাধানে পৌঁছেছি। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে এবং আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধানে এসে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
সকল পক্ষের উপস্থিতিতে গৃহীত সিদ্ধান্তের বিষয়ে স্বাক্ষরিত চুক্তির কপিটি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড এর হাতে এসেছে।
চুক্তিতে বলা হয়েছে, শ্রমিকদের মার্চ-২০২৫ মাসের বেতন ১৫ এপ্রিলের মধ্যে পরিশোধ করা হবে। এপ্রিল-২০২৫ মাসের প্রথম ৬ দিনের বেতন পরিশোধে বিশেষ চেষ্টা করা হবে।
লে-অফের সময়কালে শ্রমিকদের প্রাপ্য সুবিধাসমূহ বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী ১০ই মে'র মধ্যে পরিশোধ করা হবে। ছাঁটাই, রিজাইন ইত্যাদি কার্যক্রম বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী সম্পন্ন করা হবে এবং এসব ক্ষেত্রে বকেয়া পাওনাদি আইন অনুযায়ী ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে পরিশোধ করা হবে।