ব্যবহার কমাতে উচ্চমূল্যের সিগারেটের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা সরকারের

জানুয়ারিতে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর পর কম দামের সিগারেটের বিক্রি অনেকটাই কমে গেছে। এর ফলে বেড়ে গেছে দামি সিগারেটের চাহিদা। তাই উচ্চমূল্যের ও প্রিমিয়াম সিগারেটের ব্যবহার কমাতে দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে সরকার। সম্প্রতিক এক বৈঠকে এ তথ্য জানান অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
২৫ ফেব্রুয়ারি ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ, ২০২৪-এর খসড়া সংশোধন পর্যালোচনা জন্য গঠিত উপদেষ্টা কমিটির অন্সগ্রহনে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় অর্থ উপদেষ্টা বলেন, 'প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা কমাতে কম দামের সিগারেটের ওপর ইতিমধ্যেই বেশি হারে কর আরোপ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে বিলাসবহুল সিগারেটের ব্যবহার কমাতেও পদক্ষেপ নেওয়া হবে।'
চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সিগারেটসহ প্রায় শতাধিক পণ্যের ওপর শুল্ক ও কর বৃদ্ধি করে একটি অধ্যাদেশ জারি করে।
উপদেষ্টা কমিটির সভায় এনবিআর সদস্য (ভ্যাট ইমপ্লিমেন্টেশন অ্যান্ড আইটি) মোহাম্মদ বেলাল হোসেন চৌধুরী জানান, উচ্চমূল্যের সিগারেট বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এই খাত থেকে রাজস্ব আয় গত বছরের ফেব্রুয়ারির তুলনায় বেড়েছে।
তিনি বলেন, '২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম ২৫ দিনে এই খাত থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা, যা আগের বছরের ফেব্রুয়ারির মোট রাজস্ব ৩ হাজার ১৩১ কোটি টাকাকে ছাড়িয়ে গেছে।'
সভার কার্যবিবরণী অনুসারে, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন সিগারেট ও অন্যান্য তামাকজাত দ্রব্যের ওপর উচ্চ হারে কর আরোপের বিরোধিতা করেছেন।
তিনি বলেন, স্বল্প মূল্যের সিগারেটের ওপর কর বৃদ্ধির ফলে চোরাচালান বেড়ে গেছে। 'সিগারেটের দোকানগুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করলেই বোঝা যাবে, বিক্রি কমেনি, বরং ১০ শতাংশ বেড়েছে। এতে করে একটি অবৈধ শিল্প বেড়ে উঠছে।'
শেখ বশির বলেন, তামাকজাত পণ্যের অবৈধ বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে আনলে বছরে ১০ হাজার কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব আদায় সম্ভব।
সভায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার বলেন, ২০০৫ সালে আইন প্রণয়ন এবং ২০১৩ সালে এর সংশোধন বিবেচনায় নিলে, সরকারের রাজস্ব কমেনি, বরং সময়ের সঙ্গে তা ১২ গুণ বেড়েছে।
জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল জানিয়েছে, ২০২৩ সালে মূল্যস্ফীতির হিসাব করলে বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারের ফলে অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ৪২ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা।
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের সমর্থনে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, 'প্রস্তাবিত সংশোধনী চূড়ান্ত করার আগে সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে তামাকবিরোধী সংগঠন, তামাক কোম্পানি, ব্যবসায়ী, পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতাদের মতামত জানা জরুরি।'
তবে ফারিদা আখতার জানান, বাংলাদেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) স্বাক্ষরকারী দেশ হওয়ায় বাংলাদেশ সরকার তামাক কোম্পানির মতামত নিতে পারবে না।
তখন অর্থ উপদেষ্টা বলেন, 'আইন সংশোধনের সময় ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলোর মতামত নেওয়া প্রয়োজন। একতরফা সিদ্ধান্ত অন্যান্য খাতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।'
তিনি ফরিদা আখতারকে পরবর্তী সভায় তামাক কোম্পানি ও বিক্রেতাদের সঙ্গে বৈঠক কেন অনুচিত, কোন কোন একক সিগারেট বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে এবং এ ধরনের পদক্ষেপের প্রভাব কী হয়েছে, সে সম্পর্কে তথ্য উপস্থাপন করার নির্দেশ দেন।
ই-সিগারেট
সভায় ফারিদা আখতার বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ই-সিগারেট আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও এর ব্যবহার এখনও চোখে পড়ে। এই নিষিদ্ধ পণ্য দেশে উৎপাদিত হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন তিনি।
এর জবাবে শেখ বশির উদ্দিন বলেন, বাস্তবতা হলো, নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও দেশে এখনও ই-সিগারেট পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু এতে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
রাজস্ব স্বার্থ রক্ষার জন্য দেশে ই-সিগারেটের নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়ার পক্ষে মত দেন বাণিজ্য উপদেষ্টা।
বৈঠকে একজন এনবিআর সদস্য জানান, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক তামাক কোম্পানি ফিলিপ মরিস ইন্টারন্যাশনাল ইনক. বাংলাদেশে ই-সিগারেট উৎপাদনের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে।