‘ইনসাফ জিন্দাবাদ’ স্লোগান নিয়ে জনতার দলের আত্মপ্রকাশ

'ইনসাফ জিন্দাবাদ' স্লোগান নিয়ে আত্মপ্রকাশ করলো 'জনতার দল' নামে নতুন আরেকটি রাজনৈতিক দল। সাবেক সেনা কর্মকর্তা, বিভিন্ন দলের সাবেক নেতা, সাবেক আমলা, এনজিও কর্মীদের নিয়ে এই দল গড়া হবে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।
আজ বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই দলের আত্মপ্রকাশ ঘটে।
দলটির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শামীম কামাল জানিয়েছেন, দেশের আপামর জনতার জন্য এই দলে যোগ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
মধ্যমপন্থা হিসেবে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ধারণ করেই বাংলাদেশের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করবে নতুন এই রাজনৈতিক দল।
শামীম কামাল বলেন, গত ৫৩ বছরের বিতর্কিত রাজনীতিকে পেছনে ফেলে স্বচ্ছ রাজনীতি করতে চাই। আসন্ন নির্বাচনের জন্য বিভিন্ন এলাকায় আঞ্চলিক কমিটির মাধ্যমে সৎ-যোগ্য প্রার্থী খুঁজে বের করছি। আমরা আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দিতে চাই এবং নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় যেতে চাই।
জনতার দলের চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের রাজনৈতিক দর্শন ফিলিস্তিন। ফিলিস্তিনে নেতা তৈরী হতে দুই ঘন্টাও সময় লাগে না।
'আমরা ঐতিহাসিকভাবে মীমাংসিত বিষয় নিয়ে অহেতুক তর্কে জড়াতে চাই না। আমরা শুধুমাত্র সৎ, সাহসী, শিক্ষিত, দেশপ্রেমিক ও নিষ্ঠাবান মানুষ নিয়ে এগোতে চাই। এতে যদি আমাদের ১০ জন লোক থাকে সেই ১০ জন নিয়েই এগোতে চাই।'
তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর বিগত দিনের ইতিহাস দেখেছি। তারা (সরকারের) সময় শেষ হওয়ার আগে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
দলীয় চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশে এবারের মতো এরকম অরাজনৈতিক সুযোগ আগে কখনও আসেনি। এমন কোনো অনুষ্ঠান শেষে বাসায় ফেরার সময় গোয়েন্দা সংস্থা তুলে নিয়ে যেত বিগত সময়ে। জানি না আজকেও এমনটি ঘটবে কিনা। নাকি আমরা সবাই নিরাপদে বাসায় ফিরব।
'আমাদের দেশের অনেক মানুষ এখন নীরব ভূমিকা পালন করছে। আমরা জাতীয় ঐক্যের কোনো নিদর্শন পাই না। একাত্তরের স্বাধীনতার পর মাত্র ৩০ দিন দেশের মালিক ছিল জনগণ। একটি জাতি ব্যর্থ হওয়ার কারণ নেতৃত্ব। আমাদের যে অনৈতিক শিক্ষা মগজে গেঁড়ে আছে— সেগুলোকে ঝেড়ে ফেলতে হবে।'
তিনি বলেন, আমরা অনুদান নিয়ে এ অনুষ্ঠান করছি। অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক, জেসিও, ছাত্রসহ প্রায় ৭৪টি এনজিও সারা দেশে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। পেশাজীবীদের (রাজনৈতিক) সংগঠন বাংলাদেশে এই প্রথম। আমাদের পুঁজি হচ্ছে অতীত কর্মজীবন। আমরা ৩০০ সিটেই প্রার্থী দিয়ে আগামী সংসদে ক্ষমতায় যেতে চাই।
'আমরা প্রতিটি জেলায় সর্বজন সম্মানিত লোকদের রাখব। তারাই প্রার্থী বাছাই করবেন। আমাদের কাছে কেউ আসলে তার ব্যক্তি অবস্থান দেখবো। আমরা সকল ভালো মানুষকে দলে জায়গা দিব। প্রয়োজন মনে করলে জোট করব। আমাদের নৈতিক কমিটি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে।'
ব্রি. জেনারেল (অব.) শামীম কামাল আরও বলেন, 'আমরা কিন্তু কোনো প্রত্যাশার কথা বলিনি। আমরা মধ্যমপন্থা, ডান, বাম এগুলো বুঝি না। আমাদের সদস্য চাঁদা থাকবে। আমরা আন-অথরাইজড কোনো সোর্স থেকে চাঁদা নিব না। আমাদের দলীয় একাউন্ট পাবলিক করে দিব। সবাই দেখতে পারবে। আমরা সব রাজনৈতিক দল যেদিকে চলে— সেই স্রোতের বিপরীতে আমরা চলতে চাই।'
জনতার দলের মুখপাত্র হচ্ছেন জাতিসংঘে কাজ করে আসা সাবেক সেনা কর্মকর্তা এবং ভূরাজনৈতিক ও নিরাপত্তাবিষয়ক লেখক, জনপ্রিয় ইউটিউবার ডেল এইচ খান।
আজ বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) বিকেল সাড়ে তিনটায় পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। তারপর জুলাই- আগস্টের অভ্যুত্থানে আহতদের সম্মাননা জানানো হয়। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও এনজিও প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখা হয়।
জনতার দল আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টির) সাধারণ সম্পাদক ব্যারিষ্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, সাবেক মন্ত্রী নাজিম উদ্দীন আল আজাদ, সাবেক সংসদ সদস্য সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, সাবেক রাজনীতিবিদ আজম খান, মেজর জেনারেল (অব.) ফজল ইবনে শারেখুজ্জামান, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) সাব্বির আহমেদ, মেজর জেনারেল (অব.) ইসমাইল ফারুক চৌধুরী, সাবেক ছাত্রনেতা মাস্তুক হাসান জয় প্রমুখ।