নতুন রাজনৈতিক দল: মুদি দোকান, গুদামঘরকে অনেকের কেন্দ্রীয় অফিস দাবি

নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের আবেদনকারী ৬৫টি রাজনৈতিক দলের অনেকেরই 'কেন্দ্রীয় অফিস' মূলত ঘরবাড়ি, দোকান বা গুদামঘর। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর অনুসন্ধানে এমন চিত্র উঠে এসেছে।
নতুন দল নিবন্ধনের প্রথম ধাপে নির্বাচন কমিশনে আবেদন জমা পড়ে। নিবন্ধনের অন্যতম শর্ত হলো একটি কেন্দ্রীয় অফিস থাকা। ফলে অনেক দল ঠিকানা দিলেও সরেজমিন পরিদর্শনে সেখানে রাজনৈতিক কোনো কার্যক্রমের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণময় পার্টি
কিছু দল কেন্দ্রীয় অফিস না থাকার কথা স্পষ্ট করেই স্বীকার করেছে। যেমন 'বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণময় পার্টি'। দলটির কাগজপত্রে ঠিকানা দেওয়া হয়েছে পুরান ঢাকার রামকান্ত নন্দী লেনের একটি বাড়ির (হাউস-১৬) ঠিকানা। বাস্তবে সেখানে কোনো দলীয় কার্যালয়ের অস্তিত্ব মেলেনি; এমনকি একটি সাইনবোর্ডও দেখা যায়নি।
প্রকৃতপক্ষে, এটি একটি আবাসিক ভবন, যার নিচতলায় রয়েছে মুদি দোকান ও ঘি বিক্রির দোকান। বাড়ির মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'এখানে পরিবারগুলো থাকে। নিচতলায় কয়েকটি ঘির দোকান আছে। এই পার্টির নাম আগে কখনও শুনিনি, কোনো কার্যক্রমও দেখিনি।'
ফোনে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণময় পার্টির চেয়ারম্যান শিপন ভূঁইয়া তড়িঘড়ি করে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তিনি রিপোর্টারকে নিয়ে ভবনের পাশের একটি গলিতে ঢুকে তালাবদ্ধ একটি দরজা খোলেন। ভেতরে একটি প্রায় ২০-৩০ বর্গফুটের ঘর, যেখানে এলোমেলোভাবে কাঁচের টুকরো পড়ে ছিল।
শিপন বলেন, 'এটাই আমাদের অফিস। এখন এটি স্টোররুম হিসেবে ব্যবহার করছি। ছেলেদের বলেছি পরিষ্কার করতে। এক-দুদিনের মধ্যে টেবিল-চেয়ার নিয়ে আসবো।'
রাজনীতিতে আসার কারণ জানতে চাইলে শিপন বলেন, 'দেশের বর্তমান অবস্থা ভালো লাগছে না, তাই নিজেই দল গড়েছি।'
তিনি জানান, তিনি একজন প্রবাসী ছিলেন এবং বর্তমানে প্রবাসীরাই তার দলের সমর্থক।
নিউক্লিয়াস পার্টি
পরবর্তী গন্তব্য ছিল নিউক্লিয়াস পার্টির অফিস, ঠিকানা পশ্চিম কাফরুল, শেরেবাংলা নগর। তবে সরেজমিনে গিয়ে দেওয়া হোল্ডিং নম্বর খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে পার্টির মহাসচিব এসএমডি জেথানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আশেপাশের পরিচিত একটি বাজারের কাছে আরেকটি ঠিকানা দেন।
কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখা যায় একটি আবাসিক ভবন, কোথাও কোনো সাইনবোর্ড নেই।
জেথান জানান, ভবনের মালিকই দলের চেয়ারম্যান। 'আমরা এ ভবনের একটি তলা অফিসের জন্য নেব। এখনও পাইনি। নির্বাচন কমিশন দুই মাস সময় বাড়িয়েছে, তার মধ্যেই অফিস করবো। তখন সাইনবোর্ডও লাগাবো,' বলেন তিনি।
তিনি আরও দাবি করেন, নিউক্লিয়াস পার্টি শুধু একটি রাজনৈতিক দল নয়, এটি ভবিষ্যতে একটি প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ও হবে।
জেথান বলেন, 'আমরা কোর্স চালু করবো, যেখানে রাজনীতিক ব্যক্তিত্ব, চিন্তাধারা কেমন হওয়া উচিত তা শেখানো হবে। আমাদের নেতারা হবেন রাজনৈতিক পরামর্শক, যারা অন্যান্য দলকেও পরামর্শ দেবেন।'
বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টির (বিজেপি)
এরপর গন্তব্য ছিল ওয়ারির শশী মোহন বসাক লেনের ২৭ নম্বর বাড়ি, যেখানে বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টির (বিজেপি) কেন্দ্রীয় অফিস থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে এটি একটি আবাসিক ভবন ছাড়া কিছুই নয়।
বাড়ির মালিক জানান, এখানে কোনো রাজনৈতিক দল নেই। যিনি এই ঠিকানা ব্যবহার করেছিলেন, তিনি এখানে থাকতেন। তবে এখন আর থাকেন না।
বাংলাদেশ জনশক্তি পার্টি
রাজধানীর দিলকুশা এলাকায় বাংলাদেশ জনশক্তি পার্টি তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয় বলে দাবি করেছে। তবে ভবনের কোনো ব্যক্তি এ ধরনের কোনো অফিস সম্পর্কে কিছু জানাতে পারেননি। সাইনবোর্ডও দেখা যায়নি।
উল্লেখ্য, ১০ মার্চ নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয়। শুরুতে আবেদনের শেষ তারিখ ছিল ২০ এপ্রিল, পরে তা বাড়িয়ে ২২ জুন পর্যন্ত করা হয়। এ পর্যন্ত ৬৫টি দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে।
নির্বাচন কমিশনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আবেদনকারী দলের বেশিরভাগই ছোট পরিসরের।
'আমরা তাদের কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রম দেখিনি,' বলেন তিনি।
তিনি আরও জানান, দলগুলোর কেন্দ্রীয় অফিসসহ অন্যান্য কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, 'যদি কোনো দল শর্ত পূরণ না করে, তবে স্বাভাবিকভাবেই তাদের আবেদন বাতিল করা হবে।'
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে রাজনৈতিক দল নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৪৯টি নতুন দল নিবন্ধন লাভ করেছে।