রাস্তা অবরোধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী কোনো কাজ করা যাবে না: আইজিপি

কোনোভাবেই রাস্তা অবরোধ করার মত জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী কোনো কাজ করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম।
এসব কাজের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে আইজিপি বলেন, 'গুজব ছড়িয়ে কারখানা ভাঙচুর কার্যক্রমে অংশ নিলে, সে সব ক্ষেত্রে যারা এসব ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোনোভাবেই রাস্তা অবরোধ করার মত জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী কোনো কাজ-কর্ম করা যাবে না।'
আজ বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) সকালে গাজীপুরের ভোগরা বাইপাসে শিল্প পুলিশ-২ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে আইজিপি বলেন, 'গুজব ছড়িয়ে কারখানা ভাঙচুর কিংবা রাস্তা অবরোধের মতো কার্যক্রমে যারা জড়িত থাকবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে দাবি আদায় করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।'
ঈদযাত্রায় নির্বিঘ্নে শ্রমজীবী মানুষের বাড়ি ফেরা নিশ্চিত করতে পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করছে উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, 'শ্রমিকদের প্রতি অনুরোধ, কোনো অবস্থাতেই রাস্তা অবরোধ করে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়াবেন না। উৎসবমুখর পরিবেশ বিঘ্নিত হয়— এমন কোনো কার্যক্রম থেকে বিরত থাকুন।' কারখানার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
পুলিশের মহাপরিদর্শক বলেন, 'ঈদের আগে বেতন, বোনাসের অধিকার সবারই থাকে। যেসব কারখানা বেতন বোনাস নিয়ে গড়িমসি করে, তাদের আমরা সব সময় সতর্ক করে থাকি। কিন্তু শ্রমিকরা হুটহাট করে সড়কে নেমে জনগণের চলাচলে বাধা সৃষ্টি করেন, এটা করবেন না দয়া করে। এ বিষয়ে আইনেও উল্লেখ রয়েছে। আমরা আপনাদের বারবার সেটাই মনে করিয়ে দিচ্ছি।'
তিনি বলেন, 'আমি বিশ্বাস করি ৫ আগস্টের পরে সাধারণ মানুষ, আগে আমাদের যেভাবে দেখেছে হঠাৎ করে তারা আমাদেরকে বন্ধু মনে করবে না। তারা মনে করবে না যে, আমরা ভিন্ন লোক। এজন্য প্রতিদিন আপনারা মূল্য দিচ্ছেন। এখনো পুলিশ জায়গায় জায়গায় যাচ্ছে, কাজ করতে যাচ্ছে, আইন প্রয়োগ করতে যাচ্ছে, সেখানে আক্রমণের শিকার হচ্ছে, আসামি ছিনিয়ে নিচ্ছে। ট্র্যাফিক পুলিশ ট্র্যাফিক আইন প্রয়োগ করতে পারছে না, ট্র্যাফিক পুলিশ যদি বলে, আপনি উল্টো দিকে যেতে পারবেন না আপনি আইন মেনে চলুন-সেখানে উল্টো ট্র্যাফিক পুলিশের উপর আক্রমণ করা হচ্ছে।'
আইজিপি বলেন, 'আইন না মানার একটা প্রবণতা চলে এসেছে, কেন? তারা মনে করছে যে, পুলিশ গণবিরোধী কাজ করেছে। আমরা আমাদের মত চলব, পুলিশ লাগবে না। এটা সম্পূর্ণভাবে ভুল। একটা সভ্য দেশ পুলিশ ছাড়া কীভাবে চলবে?'
তিনি বলেন, 'পৃথিবীর কোথায় আছে উইদাউট এনি পুলিশ এন্ট্রান্স? পৃথিবীর কোথাও তো নাই। এই দেশের মানুষকে এটা বুঝতে হবে। যারা বুদ্ধিমান তারা অবশ্যই বুঝেন। এরকম কিছু লোক আছেন, যারা মনে করেন, এখন যে পুলিশ আইন প্রয়োগ করতে যাচ্ছে, তারা তাদের প্রতিপক্ষ। আসলে আমরা জনগণের বন্ধু।'
পুলিশের কাজে সকলের সহযোগিতা চেয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক বলেন, 'আমাদেরকে কাজ করতে দেন, আমরা এই সমাজেরই অংশ। আমরা যদি কাজ করতে না পারি, তাহলে আমরা সমাজে কীভাবে স্থিতিশীলতা আনব? আর স্থিতিশীলতা আনতে না পারলে আমরা কীভাবে একটি কার্যকর জাতীয় নির্বাচনের দিকে আগাবো?'
তিনি আরো বলেন, 'দেশের অপরাধ যদি দমন করা না হয়, শৃঙ্খলা যদি না হয়, নাগরিকরা থাকতে পারবে? এই ১৮ কোটি মানুষের একজনও কি ঘুমাতে পারবে? আপনারা খেয়াল করেছেন, যখন অপরাধ বেড়ে যায়, তখন দেশের অবস্থা কি হয়? তখন রাত জেগে মানুষকেই পাহারা দিতে হয়। কিন্তু এই দায়িত্ব তো আমার। এখন আমাকে যদি দেশের কিছু লোক ভুল বুঝে, দায়িত্ব পালন করতে না দেয় তাহলে পুরো সমাজ বিপথে যাবে।'
আইজিপি বলেন, 'কি অবস্থা ছিল ৫ আগস্ট এর আগে, এটা আপনারা সবাই জানেন। পুলিশের কিছু সিনিয়র অফিসারদের অতি উৎসাহ, রাজনৈতিক আনুগত্য… আমি সরকারি কর্মচারী, আমার কীসের আনুগত্য থাকবে? কিন্তু উনাদের রাজনৈতিক আনুগত্যের জন্য পূর্বে পুলিশ কলঙ্কিত হয়েছে। সারা বিশ্বে বলে এখন, পুলিশ কীভাবে এত নির্মম হলো? আমরা যা করেছি, পুলিশের সদস্য হিসেবে এই দায়ভারটা এখন আমার ওপর এসে পড়ে। আমি না করে থাকলেও দায়ভারটা এখন আমার ওপরে আসে।'
তিনি বলেন, 'আসলে তখন আমাদের যা করা উচিত ছিল-সেটা আমরা করিনি বরং আমরা মানুষের বিরুদ্ধে গিয়েছি। এটা কিছু সংখ্যক উচ্চাভিলাষী লোকের অন্ধ অন্যায় রাজনৈতিক আনুগত্যের কারণে হয়েছে। এজন্য আমাদের জীবন দিতে হয়েছে।'
আইজিপি বলেন, 'আমাদের যে লোকগুলো মারা গিয়েছে, তারা সুপেরিয়রদের অর্ডার পালন করতে গিয়ে মারা গেছে। তাদের ভুলের জন্য পুলিশ সদস্যরা জীবন দিয়েছে। এই দায়ভার যিনি জীবন দিয়েছেন, তার তো নয়। এই দায়ভার যিনি আদেশ দিয়েছেন তার। নির্দেশদাতাদের অবশ্যই পানিশমেন্ট (শাস্তি) দিতে হবে। এটা আমি বিশ্বাস করি, যারা এই অন্যায় করেছেন, তাদের অবশ্যই পানিশমেন্ট দিতে হবে। পুলিশের যে সব সদস্য বাধ্য হয়ে এই কাজ করেছেন, আমার বিশ্বাস আদালত থেকে তারা ন্যায়বিচার পাবেন।'
বাহারুল আলম বলেন, 'ঈদের সময়ে ঢাকাসহ আশপাশের জেলাগুলো অনেকটাই ফাঁকা হয়ে যায়। এই সময়টায় যাতে চুরি ডাকাতিসহ অন্যান্য ঘটনা না ঘটে তার জন্য আমাদের পুলিশ বাহিনী বিশেষভাবে নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত হয়েছে। এছাড়াও ঈদ যাত্রায় সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ যথাযথ ভাবে দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত রয়েছে।'
শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সিবগাতুল্লার সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন– ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি একেএম আওলাদ হোসেন, গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার ড. মোহাম্মদ নাজমুল করিম খান, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ডিআইজি (শিল্প পুলিশ) ইসরাইল হাওলাদার ও গাজীপুর শিল্প-২ এর পুলিশ সুপার এ কে এম জহিরুল ইসলামসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের কর্মকর্তাগণ।