অস্থিতিশীলতার কারণে এবছর নির্বাচন আয়োজন করা কঠিন হতে পারে: নাহিদ

অন্তর্বর্তী সরকার এখনও জননিরাপত্তা পুরোপুরি নিশ্চিত করতে পারছে না, এই অবস্থায় চলতি বছরেই জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করা কঠিন হবে বলে মনে করেন নবগঠিত রাজনৈতিক দল– জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে একথা বলেন নাহিদ।
গত বছরের আগস্টে গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার। ছাত্রদের নেতৃত্বে সংগঠিত এই গণ-আন্দোলনে কেন্দ্রীয় ভূমিকা রাখেন নাহিদ ইসলাম। ৮ আগস্ট গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাও ছিলেন নাহিদ। পরে নতুন রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি পদত্যাগ করেন নাহিদ।
এদিকে নানানভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে। এরমধ্যে চলতি মাসেই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, চলতি বছরের শেষে বা আগামী মার্চের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এমন প্রেক্ষাপটে, নাহিদের সঙ্গে কথা বলে রয়টার্স।
নাহিদ বলেন, 'গত সাত মাস ধরে আমরা আশা করেছিলাম, স্বল্পমেয়াদি বিভিন্ন সংস্কারের মাধ্যমে পুলিশ ব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে স্থিতিশীল করা সম্ভব হবে। তা কিছুটা করা সম্ভব হলেও, আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি… বর্তমান পুলিশিং সিস্টেম বা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আলোকে, আমি মনে করি না জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব।"
এনসিপির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিলেন নাহিদ। ড. ইউনূস নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে সময়সীমা উল্লেখ করেছেন, তা নিয়ে এই প্রথম গুরুত্বপূর্ণ কোনো রাজনীতিবিদ সন্দেহ প্রকাশ করলেন।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তরুণদের নেতৃত্বে এনসিপি জাতীয় রাজনীতিতে বড় পরিবর্তন আনতে পারে, যেখানে স্বাধীনতার পর থেকে আধিপত্য করে এসেছে মাত্র দুটি দল– আওয়ামী লীগ এবং তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি।
এই দুটি দলই যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। এই ব্যাপারে তাদের অবস্থান এক। তাদের মতে, দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
এদিকে ছাত্রদের বিভিন্ন দলের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শেখ হাসিনার শাসনামলের প্রতীকগুলোর ওপরও হামলা করা হয়েছে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার অভিযোগও উঠেছে বিভিন্ন সময়ে, তবে অন্তর্বর্তী সরকার বরাবরাই জানিয়েছে, প্রতিবেশী দেশ থেকে সংখ্যালঘু নির্যাতনকে অতিরঞ্জিত করে প্রচার চালানো হচ্ছে।
রয়টার্সকে নাহিদ বলেন, জাতীয় নির্বাচন যখনই হোক— নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত থাকবে এনসিপি। তবে নির্বাচনের আগে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের বিষয়ে সব দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হওয়াটাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক দল ও গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া সব পক্ষের সঙ্গে সংলাপের ভিত্তিতে এই চার্টার তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রে, বাংলাদেশের সব ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি ও পেশার মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে এবং অভ্যুত্থানে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে জুলাই প্রোক্লেমেশন।
নাহিদ বলেন, "আমরা যদি এক মাসের মধ্যেই ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারি, তাহলে আমরা সঙ্গেসঙ্গেই নির্বাচনের আহ্বান জানাতে পারব। কিন্তু, এতে আরও সময় লাগলে, নির্বাচনও পিছিয়ে যাবে।"
সারাদেশের বিভিন্ন পর্যায়ের শ্রেণিপেশার মানুষ অনুদান দিয়ে এনসিপি পরিচালনায় পাশে এসে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, খুব শিগগিরই নতুন একটি অফিস খোলা এবং নির্বাচনি প্রচারণার অর্থ সংগ্রহের জন্য তাঁরা ক্রাউন্ড ফান্ডিং বা গণতহবিল সংগ্রহে নামবেন।