স্বাধীন কমিশনের মাধ্যমে নতুন করে সংসদীয় এলাকা নির্ধারণের দাবি এনসিপির

জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের সঙ্গে প্রথম দফার সংলাপে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) স্বাধীন কমিশনের মাধ্যমে নতুন করে সংসদীয় এলাকা নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে। পাশাপাশি সংবিধানের মূলনীতির প্রয়োজন আছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে দলটি। সুপারিশ করেছে, যিনি একবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, তিনি যেন পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি হতে না পারেন। এছাড়া সংবিধান সংশোধনে গণভোটের বাধ্যবাধকতার কথাও বলেছে দলটি।
শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত জাতীয় সংসদে ঐক্যমত কমিশনের কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সংলাপ শেষে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, 'বৈঠক এখনো শেষ হয়নি, প্রথম ধাপের আলোচনা শেষ হয়েছে। আলোচনা চলমান থাকবে।'
তিনি জানান, 'স্বাধীন কমিশনের মাধ্যমে নতুন করে সংসদীয় এলাকা নির্ধারণ করতে হবে। আমরা আগের কোনো সীমানায় যেতে চাই না। নির্বাচন কমিশন স্বাধীন কমিশনের মাধ্যমে এটি বাস্তবায়ন করবে।'
প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা প্রসঙ্গে নাহিদ বলেন, 'আজকের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীর এককেন্দ্রিক ক্ষমতাকে কীভাবে গণতান্ত্রিক করা যায় এবং সাংবিধানিক পদে নিয়োগে প্রধান নির্বাহী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর প্রভাব কমানোর উপায় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য কী ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ম প্রয়োজন, সেটিও আলোচনায় এসেছে। এছাড়া নারীর ক্ষমতায়ন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।'
তিনি জানান, 'আমরা বলেছি, কেউ দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না এবং যিনি একবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, তিনি যেন পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি হতে না পারেন। প্রধানমন্ত্রী-শাসিত সরকার নয়, বরং মন্ত্রিপরিষদ-শাসিত সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছি। জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠনের পদ্ধতি নিয়েও আমাদের সুপারিশ রয়েছে।'
আইনসভা প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেন, 'আমরা দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভাকে সমর্থন করেছি। উচ্চকক্ষ হতে হবে ভোটের আনুপাতিক হারে, আসনের ভিত্তিতে নয়। রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনের আগেই প্রার্থীদের নাম ঘোষণা দিতে হবে। আমরা নীতিগতভাবে কমপক্ষে ১০০ আসনে সরাসরি ভোটে নারী নির্বাচনের বিষয়টিকে সমর্থন দিয়েছি, তবে পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা এখনো চলমান।'
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইলেকটোরাল কলেজ ব্যবস্থার প্রস্তাব দিয়েছে এনসিপি। এতে উচ্চকক্ষ, নিম্নকক্ষ, জেলা সমন্বয় কাউন্সিল ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রস্তাবনা রাখা হয়েছে।
সংবিধান সংশোধন বিষয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, 'উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থনের পরও গণভোটের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন করতে হবে।'
সংবিধানের মূলনীতির প্রয়োজনীয়তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে এনসিপি। নাহিদ বলেন, 'বিভিন্ন সময়ে দলীয় রাজনৈতিক অবস্থান সংবিধানে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা প্রশ্ন করেছি, মূলনীতির কাঠামোর বাইরে অন্য কাঠামো ভাবা যায় কি না। মৌলিক অধিকার সংবিধানে উল্লেখ থাকলে মূলনীতির প্রয়োজন কতটুকু আছে তা বিবেচনা করা দরকার। ৭২-এর মূলনীতি কিংবা পরে চাপিয়ে দেওয়া দলীয় মূলনীতি সংবিধানে আসতে পারবে না।'
বিচার বিভাগের রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করার প্রস্তাবও দিয়েছে দলটি। নাহিদ বলেন, 'বিচার বিভাগের জন্য আলাদা সচিবালয় গঠন, আর্থিক স্বাধীনতা, বিভাগীয় বেঞ্চ গঠন এবং জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের কথা বলেছি। উচ্চকক্ষের মতামত নেওয়ার বিষয়টিও আলোচিত হয়েছে।'
তিনি বলেন, 'সংবিধানে প্রতিটি জাতি, ধর্মীয় গোষ্ঠী ও নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর স্বীকৃতি ও অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। নিরবিচ্ছিন্নভাবে ইন্টারনেট ব্যবহারের অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। মৌলিক অধিকার আদালতের মাধ্যমে বলবৎযোগ্য করতে হবে। তবে অর্থনৈতিক অধিকারগুলো ক্রমান্বয়ে নিশ্চিত করতে হবে।'
তিনি আরও জানান, 'ডেপুটি স্পিকার বিরোধী দল থেকে একজন হওয়া উচিত বলে প্রস্তাব দিয়েছি। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সরকারের স্থিতিশীলতা বজায় রেখে সংস্কারের পক্ষে মত দিয়েছি।'
পুলিশ সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট এখনও না আসায় এনসিপি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
বৈঠকে ঐক্যমত কমিশনের সদস্য অধ্যাপক আলী রিয়াজ, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এনসিপির ৮ সদস্যের প্রতিনিধি দলে ছিলেন আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, জাবেদ রাসিন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব নাহিদা সারোয়ার নিভা।