ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে হেনস্তা, জামিনে মুক্ত কর্মচারী মোস্তফা আসিফ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ক্যাম্পাসে ছাত্রীকে হেনস্তার অভিযোগে করা মামলায় গ্রেপ্তার কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সহকারী বাইন্ডার মোস্তফা আসিফকে জামিন দিয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) তাকে আদালতে হাজির করা হলে, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক মো. তৌফিক হাসান আসিফকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন।
অপরদিকে, আসামি পক্ষের আইনজীবী জামিন চেয়ে শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করে। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেরা মাহবুব তার জামিন মঞ্জুর করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গতকাল সন্ধ্যায় আসিফকে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি এক নারী শিক্ষার্থীকে 'ওড়না ঠিকভাবে না পরা' নিয়ে কটূক্তি করেন, যা তিনি পরে স্বীকারও করেন।
এই ঘটনার পর ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কার্যালয়ে অভিযোগ দায়ের করেন এবং পরে শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেন।
এর আগে কর্মচারী আসিফের মুক্তির দাবিতে নিজেদের 'তৌহিদি জনতা' পরিচয় দেওয়া একদল বিক্ষুব্ধ জনতা গতকাল বৃহস্পতিবার (৬মার্চ) রাত থেকে শাহবাগ থানার প্রবেশপথ ঘেরাও করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। অন্তত ৮ ঘণ্টা তারা শাহবাগ থানা এলাকায় অবস্থান করে।
বেশিরভাগ তরুণদের নিয়ে গঠিত এই বিক্ষুব্ধ জনতা বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে থানার সামনে জড়ো হয় এবং আধা ঘণ্টা পর থানার ভেতরে ঢুকে পড়ে। তাদের কয়েকজন শাহবাগ থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তার কক্ষের ভেতর থেকে ঘটনার ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচার শুরু করে।
আলতাফ হোসেন নামের এক ব্যক্তি, যিনি নিজেকে 'বৈষম্যবিরোধী কারামুক্তি আন্দোলন'-এর যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে পরিচয় দেন, একাধিকবার ফেসবুকে লাইভে যান। একটি লাইভ ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি আটক ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন। আটক ওই ব্যক্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের একজন চুক্তিভিত্তিক বাইন্ডার হিসেবে কর্মরত।
দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও বিক্ষুব্ধ জনতা সেই নির্দেশ অগ্রাহ্য করে। একপর্যায়ে দায়িত্বরত অফিসার এসআই একরামুল ইসলাম জনতাকে জানান, কাউকে আটক বা মুক্তির বিষয়ে তার কোনো আইনি ক্ষমতা নেই।
দায়িত্বরত কর্মকর্তা বারবার জনতাকে 'মব' তৈরি না করার অনুরোধ জানান। এর জবাবে জনতা বলে, 'আমরা কোনো মব তৈরি করিনি। আমাদের এক সহযোদ্ধাকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তার প্রতি সংহতি জানাতেই আমরা এসেছি।'
আলতাফ হোসেন তার এক ফেসবুক লাইভে বারবার বলেন, 'আমি এখানে [থানায়] আমাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা জানাতেই এসেছি।'
শাহবাগ থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা একরামুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, রাত ২টা ১৫ মিনিটের পর জনতা থানা থেকে বেরিয়ে থানার সামনে অবস্থান নেয়।
প্রসঙ্গত, ওই শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্টে হয়রানির ঘটনার বিস্তারিত উল্লেখ করেন। মোস্তফা আসিফের ছবি শেয়ার করে তিনি লেখেন, আজ শাহবাগ থেকে ফেরার পথে এই ব্যক্তি আমাকে হয়রানি করেছে। সে হঠাৎ রাস্তার মধ্যে আমাকে থামিয়ে বলে আমার পোশাক ঠিক নেই,আমি পর্দা করিনি এবং তার আচরণ ছিল খুবই আগ্রাসী।
ওই শিক্ষার্থী লেখেন, তিনি ভেবেছিলেন ওই ব্যক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাই তার বিভাগ ও হল সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, তিনি ক্যাম্পাসের কেউ নন।
তিনি আরও জানান, তিনি সালোয়ার-কামিজ ও মাথায় ওড়না পরনে ছিলেন। তিনি যখন বিষয়টি প্রক্টরকে জানানোর হুমকি দেন, তখন ওই ব্যক্তি সেখান থেকে পালিয়ে যান।