গতি ফিরেছে দেশের অর্থনীতিতে, জুলাইয়ে বাংলাদেশের পিএমআই ৬১.৫ শতাংশ

গেল জুলাইয়ে বাংলাদেশের পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্স (পিএমআই) স্কোর দাঁড়িয়েছে ৬১.৫, যা দেশের অর্থনীতিতে গতি ফেরারই বার্তা দিচ্ছে। আগের মাসের তুলনায় এই স্কোর বেশি ৮.৪ পয়েন্ট।
অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কার মধ্যেও এই সূচক উল্লম্ফনের মাধ্যমে একটি শক্তিশালী বার্তা দিচ্ছে: বাংলাদেশ উৎপাদন এবং সেবাখাতে নতুন করে প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। তবে কৃষি খাত কিছুটা ধীর গতিতে এগিয়েছে, আর নির্মাণ খাত- যা আগের মাসে সংকোচনের মধ্যে ছিল, তা আবার সম্প্রসারণে ফিরেছে—যা অর্থনীতির ভারসাম্যপূর্ণ পুনরুদ্ধারকে নির্দেশ করে।
ব্যবসায়ী সংগঠন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ও বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ যৌথভাবে পিএমআই সূচক প্রকাশ করে। কৃষি, নির্মাণ, উৎপাদন ও পরিষেবা—এই চার খাতের প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীদের মতামতের ভিত্তিতে পিএমআই সূচক প্রকাশ করে তারা।
এসব খাতের বাস্তব ব্যবসায়িক গতিবিধি, নতুন অর্ডার, কর্মসংস্থান, খরচ ও ব্যাকলগ (পূর্বের অপূর্ণ অর্ডার)–এর ওপর ভিত্তি করে হিসাব করা হয়। সূচকে ৫০ এর বেশি স্কোর মানেই অর্থনৈতিক বিকাশ, আর ৫০ এর নিচে হলে তা সংকোচনের বার্তা দেয়।
নির্ধারিত অর্থনৈতিক বাস্তবতায় যখন বাংলাদেশ মুদ্রাস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট এবং বৈদেশিক ঋণের চাপ মোকাবেলা করছে, তখন জুলাই মাসে পিএমআই ৬১.৫-এ পৌঁছানো নিঃসন্দেহে একটি উজ্জ্বল বার্তা। এই পরিসংখ্যান শুধুই একটি সংখ্যা নয়—এটি শিল্প, সেবা ও নির্মাণ খাতে জাগ্রত আশাবাদেরও বার্তা, যা দেশের অর্থনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসার ইঙ্গিত দেয়।
"জুলাইয়ে বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনীতি সম্প্রসারিত হয়েছে, যা মূলত সেবা ও উৎপাদন খাতের প্রবৃদ্ধির ওপর ভর করেই হয়েছে — যেখানে রপ্তানি আয় পৌঁছেছে সর্বোচ্চ মাসিক মাইলফলক ৪৭৭ কোটি ডলারে। তবে কৃষিখাত তুলনামূলকভাবে ধীর গতিতে সম্প্রসারিত হয়েছে, যা বর্ষাকালে (বন্যাজনিত) ব্যাঘাত ও লিন পিরিয়ডকে তুলে ধরেছে," — বলেছেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও সিইও এম মাসরুর রিয়াজ।
প্রধান খাতগুলোর সম্প্রসারণ বিশ্লেষণ
কৃষি খাত তার টানা ১০ মাস সম্প্রসারণ ধরে রাখলেও, জুলাইয়ে তার গতি কিছুটা কমেছে। এখাতের নতুন ব্যবসা, উৎপাদন কার্যক্রম এবং ইনপুট ব্যয়ের সূচকগুলোতে ধীরগতির সম্প্রসারণ দেখা গেছে, যা স্বাভাবিক বর্ষাকালীন মন্দাভাবের পরিচায়ক।
তবে কৃষি খাতে কর্মসংস্থান সূচক টানা দ্বিতীয় মাসে সংকোচনের ইঙ্গিত দিয়েছে। এটি গ্রামীণ শ্রমবাজারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
বাংলাদেশের উৎপাদন খাত জুলাই মাসে টানা ১১তম মাসের মতো সম্প্রসারণ অব্যাহত রেখেছে, এবং তা হয়েছে আগের মাসের তুলনায় দ্রুত গতিতে। নতুন অর্ডার, কারখানা উৎপাদন, কাঁচামাল ক্রয়, প্রস্তুত পণ্য, আমদানি, ইনপুট মূল্য, সরবরাহকারীদের ডেলিভারি, এবং পূর্বের অর্ডার ব্যাকলগের সূচকগুলোতে বিস্তৃত ইতিবাচক প্রবণতা লক্ষ করা গেছে।
তবে বিপরীতভাবে নতুন রপ্তানি এবং কর্মসংস্থান সূচক দুটোতেই সংকোচন দেখা গেছে, যা দেশের শ্রমবাজার এবং বৈদেশিক চাহিদার কিছুটা দুর্বলতার ইঙ্গিত দেয়।
অন্যদিকে, নির্মাণ খাত জুন মাসে প্রথমবারের মতো সংকোচনের মুখে পড়ার পর, জুলাইয়ে ফের সম্প্রসারণে ফিরে এসেছে। নতুন কাজ, নির্মাণ কার্যক্রম, ইনপুট খরচ এবং ব্যাকলগ সূচকে ইতিবাচক অগ্রগতি দেখা গেলেও, কর্মসংস্থানে এটি টানা তৃতীয় মাসে সংকোচন রেকর্ড করেছে।
বাংলাদেশের পরিষেবা খাতে টানা ১০ মাস ধরে সম্প্রসারণ হয়েছে। নতুন ব্যবসা, ব্যবসায়িক কার্যক্রম, কর্মসংস্থান, ইনপুট ব্যয় এবং ব্যাকলগ — সব সূচকেই জুলাইয়ে শক্তিশালী সম্প্রসারণ দেখা গেছে।