যুক্তরাষ্ট্রের সাথে শুল্ক আলোচনা চলছে, উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই: ব্যবসায়ী নেতাদের জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল

যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্ক হ্রাসে বাণিজ্য চুক্তির লক্ষ্যে উচ্চপর্যায়ের দর-কষাকষি চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার রাত ৯টা থেকে ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধি ইউএসটিআর অ্যাম্বাসাডর জেমিসন গ্রিয়ারের সঙ্গে এ আলোচনায় বসে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল।
কর্মকর্তা পর্যায়ে আগের আলোচনা যেসব ইস্যুতে অচলাবস্থায় পৌঁছেছিল, সেগুলোর সমাধান হতে পারে এই উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে—এমনটাই আশা করছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা।
তিনদিনব্যাপী এ আলোচনার দ্বিতীয় দিনে উভয় পক্ষই বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলোতে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদারে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। আলোচনা শুরু হয়েছে বুধবার থেকে এবং তা চলবে শুক্রবার পর্যন্ত।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, 'বিস্তৃত আলোচনা হয়েছে, দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্কের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে কথা হয়েছে।'
বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তার সঙ্গে ওয়াশিংটনে আছেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক ড. নাজনীন কাউসার চৌধুরী। ঢাকায় থেকে অনলাইনে যুক্ত আছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
এদিকে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সঙ্গে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা সাক্ষাৎ করেন। তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান আলোচনা সম্পর্কে খোঁজ নেন।
এ বিষয়ে টিবিএসকে ফাওজুল কবির খান বলেন, 'প্রায় সব চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্টরা আমার সঙ্গে বৈঠক করতে এসেছিলেন। তারা যুক্তরাষ্ট্রের ট্যারিফ নেগোসিয়েশনের বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। আমি তাদের বলেছি, তিনদিনব্যাপী আলোচনা চলছে এবং এখন পর্যন্ত ফলাফল ভালো। ব্যবসায়ীদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।'
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান বাবু বলেন, যেসব ইস্যুতে আমাদের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, সেসব বিষয়ে সিদ্ধান্তের আগে সরকার যেন আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে—এই অনুরোধ জানিয়েছি।
তিনি অভিযোগ করেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ট্যারিফ [শুল্ক] নিয়ে আলোচনার বিষয়ে আমাদের পুরোপুরি অন্ধকারে রাখা হয়েছে। ট্যারিফ আলোচনায় অগগতি সম্পর্কে উপদেষ্টার কাছে আমরা জানতে চেয়েছি। তিনি আশার কথা জানিয়ে বলেছেন যে, প্রথমদিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের ওপর আরোপিত ট্যারিফ কমে যাবে।'
বিজিএমইএ সভাপতি আরও বলেন, আমরা চাই বাংলাদেশের ওপর শুল্কভার যেন ভারতের, পাকিস্তানের বা ভিয়েতনামের চেয়ে বেশি না হয়। বরং সমান বা কম হলে ভালো।
এছাড়াও প্রথম দিনের বৈঠক নিয়ে বিদ্যুৎ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ফেসবুকে লেখেন, 'সহকর্মী বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সঙ্গে কথা হয়েছে। আজ তিনদিনব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বাণিজ্য আলোচনার প্রথম দিন। আগামীকাল ও পরশু আরও আলোচনা চলবে।'
তিনি লেখেন, 'প্রথম দিনের আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি, বাণিজ্য, জ্বালানি, মেধাস্বত্বসহ নানা খাতের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। আমাদের প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্রের সব প্রশ্নের জবাব দিয়েছে এবং তাদের বক্তব্য শুনেছে।'
এছাড়া ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মর্তুজা তার ফেসবুকে লিখেছেন, 'প্রথম দিনের বৈঠকে অধিকাংশ শর্তেই দুই পক্ষ একমত হয়েছে।'
তবে ঢাকায় কর্মরত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এখনো আলোচনার অগ্রগতির বিষয়ে কোনো স্পষ্ট ধারণা পাননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, 'গত এপ্রিল থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত আলোচনা শেষে আমরা যেসব সম্ভাব্য ফল অনুমান করেছিলাম, ট্রাম্প প্রশাসনের ৩৫ শতাংশ রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ আরোপের চিঠি পেয়ে বুঝেছি—সেগুলো বাস্তবতার সঙ্গে মিলেনি।'
তিনি যোগ করেন, 'তাই এবার আমরা আলোচনার পূর্ণাঙ্গ সমাপ্তির পর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি না পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চাই।'